Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:38 pm

বিশ্বের পথে একাকী : পর্ব চার

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ভেইল শহরের বাসিন্দা জেনিফার। তার মা ছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট, বাবা এভিয়েশন কর্মকর্তা। কর্মসূত্রে তার জীবনের অনেক সময় কেটেছে ভ্রমণ করে, বিশেষ করে উড়োজাহাজে চড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিশ্বের চার মহাদেশের ৯টি দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন একাকী। আজ থাকছে তার ফিনল্যান্ড ভ্রমণের গল্প
ফিনল্যান্ড: ডিসেম্বর ২৪-২৮, ২০০৯

স্কটল্যান্ড ভ্রমণ শেষে আজ এসেছি ফিনল্যান্ডে। যদিও ২২ ডিসেম্বর এখানে আসার কথা ছিল। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ওইদিনের ফ্লাইটটি বাতিল হয়ে যায়। ধীরে-সুস্থে সবকিছু নতুন করে গুছিয়ে আবার ফিনল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দিই ২৩ ডিসেম্বর রাতে। এর আগে আরও দুবার ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। প্রথমটি লন্ডন ঘুরে, দ্বিতীয়টি এডিনবার্গ হয়ে। যাহোক, আমি কখনও কোনো বিষয়ে তাড়াহুড়ো করিনি। তবে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্নোবুট আনতে ভুলে গেছি।
ফিনল্যান্ডে পৌঁছে প্রায় দুদিন বিশ্রাম নিয়েছি, শীতকে উপভোগ করেছি। আজ ২৬ ডিসেম্বর রাতে ল্যাপল্যান্ডের একটি লেক দেখতে এসেছি। শুধু লেকটাই নয়, এখানকার বনজঙ্গলও বরফে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। আর্কটিক সার্কেল থেকে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। রাতের তারাগুলো যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মনে হচ্ছে, তারারা আলোকবর্ষ দূরে নয়, বরং কাছের। চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত চারদিক। সরাসরি এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছি। আমরা দল বেঁধে এখানে এসেছি, গাড়িতে চড়ে। এলাকাটি পর্বতময়, মাঝেমধ্যে গাছের সারি। এমন ভূদৃশ্যের মধ্যে রাতের বেলা ড্রাইভিং কি কম সৌভাগ্যের? গাছপালা সব বরফে ঢেকে আছে। অতিপ্রাকৃত মনে হচ্ছিল সবকিছু। ভাবছি, সাদা স্পেসস্যুট পরে ভিনগ্রহে চলে এসেছি কি নাÑসুপারম্যানের সেই আইসল্যান্ডে! অথচ মাত্র চার সপ্তাহ আগে আফ্রিকার জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছি, ভাবতেই শিহরিত হই। ভাবতে ভাবতে
সামিদের একটি তাঁবুকোটায় ঢুকে পড়ি, চা পান করি। সামিরা ল্যাপল্যান্ডের আদিবাসী। আমাদের সঙ্গে স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের কয়েকজন ভ্রমণপিয়াসী আছেন। প্রসঙ্গত, ল্যাপল্যান্ডকে সান্তা ক্লজের আদিবাড়ি হিসেবে গণ্য করা হয়। ডিসেম্বরে এখানে সূর্য ওঠে না বললে চলে।
ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের সঙ্গে ফিনিশদের একটি মিল খুঁজে পেয়েছি। এরাও সহজে অপরিচিতজনকে আপন করে নেয়। এই যেমন একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়ে পরিচয় হয় এক দম্পতির সঙ্গে। তাদের সঙ্গে গান নিয়ে আলাপ করি। আমি চিরায়ত মার্কিনির মতো; যা শুনি তাতেই ‘নাইস’ বলতে থাকি। অপরদিকে তারাও বলে ‘নিস’। খাওয়া শেষে তাদের বাড়িতে যাওয়ার দাওয়াতও পাই। এ বিষয়টির সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের মিল খুঁজে পেয়েছি।
কুকুর নিয়ে আমার মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করলেও ফিনল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে ডগ সেøজিং মিস করার কোনো অর্থই হয় না। আশপাশে প্রায় ৩০টি কুকুর, নেকড়ের মতো দেখতে। তবু ভয় পাইনি। এদের মালিক ২৫ বছর বয়সী সুন্দর একটি মেয়ে। তার ৩০টি কুকুর ও পাঁচটি ঘোড়া রয়েছে। বরফ-ঢাকা নদীর ওপর দিয়ে সেøজিং করি সেবারই প্রথম।
ল্যাপল্যান্ডের পাশাপাশি ইনারি ও কাকসøাট্র্যানেনও ঘুরে বেড়াই। এর মাঝে একবার এস্কিমোদের ঘর ইগলুতে ঘুমাই। এসব ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় বেশ ভালো। যেমন বাইরে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি হলে এখানে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি অনুভূত হয়।

ভাষান্তর: রতন কুমার দাস