পর্ব পাঁচ……….
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ভেইল শহরের বাসিন্দা জেনিফার। তার মা ছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট, বাবা এভিয়েশন কর্মকর্তা। কর্মসূত্রে তার জীবনের অনেক সময় কেটেছে ভ্রমণ করে, বিশেষ করে উড়োজাহাজে চড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিশ্বের চার মহাদেশের ৯টি দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন একাকী। আজ থাকছে তার হাইতি ভ্রমণের গল্প
হাইতি: আগস্ট ২৩, ২০১০
২০০৯ সালের এপ্রিলে হাইতিতে এসেছিলাম, দু’সপ্তাহের জন্য। তখন আর এখনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের রেশ রয়ে গেছে এখনও। মানুষজন তাঁবু কিংবা রাস্তায় ঘর বেঁধে থাকছেন। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পাথরের টুকরা, ঘরবাড়ি ভাঙাচোরা। কষ্টের বিষয়, ভূমিকম্পের আগেও ঠিক এমনই ছিল হাইতি। আমার এক সহকর্মী কয়েক বছর আগে এখানে একবার এসেছিলেন। পরে এই জুনে আরও একবার। তিনিও একই কথা বলেছেনÑকোনো পরিবর্তন নেই এই দেশটির। সুপেয় পানির অভাব আগেও যেমন ছিল তেমনই আছে, থাকার জায়গা অপ্রতুল, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বললে চলে।
শুনেছি, ভূমিকম্প-উত্তর হাইতির পুনর্বাসনের জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ উন্নয়ন কেবল কাগজে। আসলে হাইতির সরকার ও বিদেশি দাতা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটি ঘটেছে বা ঘটছে। নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে এই দেশটি কীভাবে তা সইবে এমন দুর্ভাবনাই কেবল মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। এখানে কোনো আশ্রয়কেন্দ্রও নেই।
আমার অভিজ্ঞতা বলে, হাইতির জনগণ খুব ইতিবাচক মানসিকতার। দোকান, গ্যাস স্টেশন, কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে তাদের সঙ্গে মিশছি। তাদের সংস্কৃতি জানার চেষ্টা করছি। ফ্রেঞ্চ জানি কিছুটা, এর প্রয়োগও করছি যথাস্থানে। এখানে ঘুরে বেড়ালে মনে হয় না, ক্যারিবীয় অঞ্চলে রয়েছি; বরং পশ্চিম আফ্রিকার কোনো দেশে রয়েছি, এমনটি মনে হয়। তাদের মতো এখানকার মানুষের কাছে বিদেশিরা ভীষণ কৌতূহলোদ্দীপক। চোখ বড় বড় করে তাকানো লোকের অভাব নেই যেন। তবে সেই চোখে রয়েছে কেবল শূন্য দৃষ্টি, কিংবা কিছু বিক্রির চেষ্টা।
আছি হাইতির রাজধানীতে। কার্যত এখানে বর্তমানে কোনো গণপরিবহন সেবা নেই। সবখানে আবর্জনার স্তূপ। পানযোগ্য পানি নেই। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ট্যাবলেট এনেছিলাম, কিন্তু খাবার পানির কোনো উৎসই পাইনি। বিদ্যুৎসেবা নেই। সন্ধ্যার পরে রাস্তার কোথাও আলো চোখে পড়ে না। দু-একটি মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি আসা-যাওয়া করে, এদের ফ্লাশলাইটের আলো দেখতে পাই মাঝেমধ্যে। তবে আজ রাতে আকাশে আলোর ঝলকানিরও বিরাম নেই। হাইতির এই অবস্থা দেখে আমার চিন্তাভাবনা অসংলগ্ন হয়ে পড়েছে। আজ আর নয়। এখানকার কাজ সেরে পাড়ি জমাব উগান্ডায়।
ভাষান্তর: রতন কুমার দাস