অবকাশ যাপনের সুন্দর মাধ্যম সমুদ্র ভ্রমণ। এমন ভ্রমণ আমাদের চাঙা করে তোলে। তাই একে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। এই ভ্রমণের বাহনকে বলা হয় প্রমোদতরী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচ প্রমোদতরী নিয়ে আজকের আয়োজন
হারমোনি অব দ্য সিস
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী হারমনি অব দ্য সিস। রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ লিমিটেডের ওয়েসিস সিরিজের এ জাহাজটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী। এসটিএক্স ফ্রান্স কোম্পানির সেইন্ট নাজাইর শিপইয়ার্ডে এ জাহাজটি নির্মাণ করা হয়। এর নির্মাণকাজে ব্যয় হয় প্রায় এক দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের জুনে হারমোনি প্রথম সমুদ্রযাত্রা করে। দৈর্ঘ্যে ৩৬২ মিটার ও প্রস্থে ৬৬ মিটার এটি। ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৭০০ যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজটি বর্তমানে বার্সেলোনা থেকে রোম রুটে চলাচল করছে। এর প্রধান আকর্ষণ চক্রাকার রাস্তা, যেখানে সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে। দুই হাজার ৭৫০টি কক্ষ রয়েছে। ভাইটালিটি স্পা, বাচ্চাদের জন্য স্পø্যাশওয়েস পুল, অত্যাধুনিক ওয়াটার স্পাইড ও ড্রাই স্পাইড, ২৩টি সুইমিংপুল, দুটি সার্ফিং স্পেস, পাজেল ব্রেক, গেমিং স্পেস, ২০টি ডাইনিং স্পেস, অ্যাকুয়া থিয়েটার, এক হাজার ৪০০ আসনবিশিষ্ট রয়্যাল থিয়েটার, পিংপং কোর্স, মিনি গলফ কোর্স, বাস্কেটবল কোর্ট, জিপলাইন, বায়োনিক বারÑযেখানে দুটি রোবট সব ধরনের পানীয় পরিবেশন করে। এছাড়া জাহাজটিতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। এর করিডরগুলো ১১ হাজারের অধিক চিত্রকর্মে সজ্জিত।
অ্যালিউর অব দ্য সিস
এটি ৩৬২ মিটার লম্বা ও উচ্চতা ৭২ মিটার। অর্থাৎ একটি সাততলা ভবনের সমান। এর সামগ্রিক নকশা ও নির্মাণের কাজটি করেছে ফিনল্যান্ডের এসটিএক্স ইউরোপ কোম্পানি। জাহাজটি নির্মাণে এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪২ কিলোমিটার। প্রথমে জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল প্রিন্সেস ফিয়োনা। ২০০৯ সালে সমুদ্রে ভাসার এক বছরের মাথায় এর নাম পরিবর্তন করে অ্যালিউর অব দ্য সিস রাখা হয়। অ্যালিউরের যাত্রী ধারণক্ষমতা পাঁচ হাজার ৪০০ জন। বিলাসবহুল এ জাহাজে রয়েছে একটি দ্বিতল ড্যান্স হল, এক হাজার ৩৮০ আসনবিশিষ্ট একটি থিয়েটার, জিমন্যাসিয়াম, বরফে স্কেটিং করার ব্যবস্থা, আকর্ষণীয় সি-ফুড রেস্টুরেন্ট, ২৫টি মাঝারি আকারের রেস্টুরেন্ট, ওয়েলপুল, ইয়োগা ও সূর্যস্নানের জন্য ১০টি যাত্রী ডেক। আর রাতে আকাশে নক্ষত্রমণ্ডলীর দেশে ঘুরে আসার জন্য রয়েছে টেলিস্কোপের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে আপনার সমুদ্রযাত্রাকে আনন্দদায়ক করতে সব ব্যবস্থা রেখেছে অ্যালিউর অব দ্য সিস।
ওয়েসিস অব দ্য সিস
‘ওয়েসিস’ শব্দের অর্থ মরুদ্যান। সমুদ্রের বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির মাঝে ওয়েসিস সিরিজের জাহাজটিও মরুদ্যানের মতো। দৈর্ঘ্য ৩৬১ মিটার, প্রস্থ ৬০ মিটার। জাহাজটি তৈরি করেছে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। এর নির্মাণ ব্যয় এক দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সাল থেকে এ জাহাজটি পর্যটন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। সর্বোচ্চ ছয় হাজার ২০০ যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজটি ঘণ্টায় ৪২ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সাধারণ শয়নকক্ষের পাশাপাশি ওয়েসিসে রয়েছে ঝুল বারান্দাসহ বিলাসবহুল কক্ষ ও ডুপ্লেক্স স্যুট। আগের দুটি প্রমোদতরীর চেয়ে বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এতে। অ্যাকুয়া থিয়েটার, বিশাল উš§ুক্ত করিডর, সার্ফিং স্পেস, একটি কেন্দ্রীয় পার্ক, জিপলাইনের ব্যবস্থা, সুউচ্চ ওয়াটার কোস্টার রাইড, ভলিবল ও বাস্কেটবল কোর্টসহ অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রেস্টুরেন্ট, বার, সুইমিংপুল তো আছেই।
কোয়ান্টাম অব দ্য সিস
এটি রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ কোম্পানির কোয়ান্টাম সিরিজের প্রথম জাহাজ। ২০১৪ সাল থেকে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এটি যৌথভাবে নির্মাণ করে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ও মেয়ার রেফট কোম্পানি। এটি বর্তমানে চীনের সাংহাই থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যাত্রী পরিবহন করছে। ৩৪৮ মিটার লম্বা। প্রস্থ ৪৯ দশমিক পাঁচ মিটার। ৯৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় জাহাজটি তৈরির পেছনে। ২০০০ শয়নকক্ষে চার হাজার যাত্রী বহন করতে পারে। সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা পাঁচ হাজার যাত্রী। দুটি আকর্ষণীয় শপিংমল রয়েছে এতে। বাস্কেটবল কোর্ট, সার্ফিং স্পেস আর পার্ক, কোয়ান্টামের ব্যালকনিসহ ডুপ্লেক্স কক্ষ রয়েছে।
ওভেশন অব দ্য সিস
৩৪৮ মিটার লম্বা ও ৪৯ মিটার প্রস্থের ওভেশন অব দ্য সিস রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ কোম্পানির কোয়ান্টাম সিরিজের তৃতীয় জাহাজ। দুই হাজার ৯০টি শয়নকক্ষ, তিনটি সিনেমা হল, ওয়েলপুল, শিশুদের জন্য বিশেষ পার্ক, ওয়াটার পার্ক, ক্যাসিনো, বার, রেস্টুরেন্ট, একাধিক ডিসকো, বিলাসবহুল সুইমিংপুল, শ’খানেক খাবার ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। সব মিলিয়ে জাহাজটি যেন পূর্ণাঙ্গ একটি শহর। শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থার পাশাপাশি ওভেশনের ওপরের ডেকে রয়েছে সার্ফিংয়ের ব্যবস্থা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ক্যারিবিয়ান ক্রুজ কোম্পানি জাহাজটিকে সমুদ্রে ভাসায়। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২২ নটিক্যাল মাইল। সর্বোচ্চ চার হাজার ৯০০ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।
ইন্টারনেট অবলম্বনে শিপন আহমেদ