Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 8:36 pm

বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্ব হারাচ্ছে মার্কিন ডলার?

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য লড়াইয়ে জড়িয়েছেন। তার প্রশাসন চীনসহ অন্যান্য দেশের পণ্যে শুল্কারোপ এবং বড় বড় কথা দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধে ব্যস্ত। রাশিয়া ও তুরস্কের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটনকে সুযোগ বুঝে পালটা জবাবও দিচ্ছে তারা। এখন রাশিয়া ও তুরস্ক উভয়ের পক্ষ থেকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে। খবর ডয়েচে ভেলে।
মার্কিন মুদ্রার জয়যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মিসরের সুয়েজ খালের পাশে গ্রেট বিটার হ্রদে নোঙর করা ইউএসএস কুইন্সি নামের জাহাজে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ও সৌদি বাদশাহ ইবনে সৌদ উপস্থিত ছিলেন। সৌদি তেলে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার এবং ডলারের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে দেশটিকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন রুজভেল্ট। এর মধ্যে অনেকবারই সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, কিন্তু এ চুক্তির বরখেলাপ করেনি কোনো পক্ষই। পরবর্তী দশকগুলোতে তেলের চাহিদা যতই বেড়েছে, মার্কিন ডলারের চাহিদাও বেড়েছে তরতর করে। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যম হয়ে ওঠে ডলার। এখনও মোটামুটি একই অবস্থানেই আছে ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের হিসেব মতে বিশ্বের মোট রিজার্ভের প্রায় ৬২ শতাংশই সংরক্ষিত আছে ডলারে। বাকি অংশের মধ্যে ২০ শতাংশ আছে ইউরোতে এবং ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ডে সংরক্ষিত আছে পাঁচ শতাংশ রিজার্ভ। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ডলার। বিশ্বজুড়ে লেনদেনের ৮৫ শতাংশই হয়ে থাকে ডলারে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভও ডলারের নেতৃত্ব ধরে রাখার নীতিই অটুট রেখেছে এবং পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, যাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের কর্তৃত্ব ঠিক থাকে। ডলারের তারল্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। যে কোনো সময় ডলার দ্রুত বিনিময় করা যায় বলে এটিকে তারা একটি নিরাপদ মুদ্রা বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু এর বিপরীত দিকও রয়েছে। কোনো বিপদের গন্ধ পেলে সবাই ডলারের দিকেই ছুটে যায়। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির বড় সব ধাক্কার উৎস বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রেই হয়ে থাকে। ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল।
অর্থনীতিবিদ ব্যারি আইখেনগ্রিন এ অবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘নিদারুণ সুবিধা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ মুহূর্তে ডলারের কোনো বিকল্পও তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। ডলারের সম্ভাব্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের ইউরো এবং চীনের ইউয়ান নিজেরাই অনেক সমস্যায় আছে। আইখেনগ্রিন বলছেন, ইউরোর ওপর রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, অন্যদিকে ইউয়ানের ওপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অনেক বেশি। অর্থাৎ, বড় ধরনের সংকটের মুহূর্তে ইউরোকে সমর্থন দিয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মতো একক কোনো সরকার নেই। অন্যদিকে চীনের ইউয়ান বাজারের গতিপ্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ না হয়ে দেশটির সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। তারপরও বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য কমার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি নিয়ে বড় বড় কথা বলেন। বিশেষ করে চীনকে মুদ্রাব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন তিনি। কিন্তু ঠিক উলটো কাজটা করেছেন নিজের ঘরে এসে। ফেডারেল ব্যাংককে তিনি ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তার পরামর্শমতো মুদ্রানীতি ঘোষণার জন্য। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত সে চাপ সামলে নিজস্বতা বজায় রেখেছে বটে, কিন্তু কতদিন ফেডারেল ব্যাংক রাজনীতি নিরপেক্ষ থেকে নীতি ঘোষণা করতে পারবে, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সমচেয়ে বড় কথা, ট্রাম্পের অর্থনীতিতে কেউই আর ভরসা রাখতে চায় না। মুখে যা বলেন ট্রাম্প, কাজে করেন তার ঠিক উলটো। বড় বড় বাণিজ্য চুক্তির কথা বলে এখন পর্যন্ত আগের বিভিন্ন চুক্তি শুধু বাতিলই করে চলেছেন তিনি। উপরন্তু, চীন, রাশিয়া এবং সর্বশেষ তুরস্কের সঙ্গে জড়িয়েছেন বিবাদে। ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিবেশে ডলারকে আর আগের মতো নিরাপদ মনে করছেন না অনেকেই।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ডলারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে কোন মুদ্রা? রাশিয়া এবং তুরস্ক এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে, ডলারের বদলে তারা নিজ নিজ জাতীয় মুদ্রাতে বাণিজ্য চালাতে আগ্রহী। যদি এ দুই দেশ অন্যদেরও এ ব্যাপারে রাজি করাতে পারে, তাহলে ডলারের আধিপত্য স্পষ্টতই অনেক কমে আসবে। তবে যতদিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত আস্থায় থাকবে, ততদিন ডলারও সবচেয়ে শক্তিশালী থাকার সম্ভাবনাই বেশি।