গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামায়াত আয়োজিত বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে গতকাল। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে। চারদিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে শেষ হবে একই নিয়মে। মুরব্বিদের কাছে দ্বীন সম্পর্কিত বয়ান ও নসিহত শুনতে যেসব ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে এতে যোগ দিচ্ছেন, আমরা তাদের নিরাপদ যাত্রা কামনা করি। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় ইসলামের যে শান্তিবাদী রূপ ফুটে ওঠে, ধর্ম প্রচারে সেগুলোকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন তাবলিগ জামায়াতের অনুসারীরা। প্রত্যাশা করি, এখান থেকে ফিরে গিয়ে ধর্মের মহিমান্বিত এ দিকগুলো তারা আরও বেশি প্রচার করবেন নিজ পরিবার ও সমাজে। নিকট অতীতে দেশে জঙ্গিবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন নির্দেশনার অপব্যাখ্যার মাধ্যমে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের শান্তি-সংক্রান্ত নির্দেশনা পরিপালনের মাধ্যমে তা রোধ করা সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের প্রত্যেকে যদি এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন, তা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বস্তুত সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই বাংলাদেশের ঐতিহ্য। এটা বিনষ্ট হলে এর সরাসরি প্রভাব যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পড়বে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে। এজন্য আমরা চাইবো, এ ধর্মের ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার বাণীগুলোও সমানভাবে তুলে ধরা হবে ইজতেমার বয়ানে। আর মুসল্লিরা নিজেদের পাশাপাশি দাওয়াতের মাধ্যমে এ ধারায় জীবনযাপনে উৎসাহিত করবেন অন্যদের। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকেও অংশ নিতে দেখা যায় বিশ্ব ইজতেমায়। প্রাত্যহিক জীবনে একজন নারীকে মা, বোন কিংবা স্ত্রী হিসেবে পালন করতে হয় মমতাময়ীর ভূমিকা। তারা পারেন নিজেদের অর্জিত শিক্ষা দিয়ে একটি জাতিকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। বিশ্ব ইজতেমায় পাওয়া ধর্মীয় শিক্ষাগুলো যদি তারা নিজেদের পরিমণ্ডলে যথাযথ উপায়ে কাজে লাগান, তাহলেও উপকৃত হবে জাতি। এ আয়োজনে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো যায় কি না, তাও আমরা ভেবে দেখতে বলবো তাবলিগ জামায়াতের মুরব্বিদের।
কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা হচ্ছে দুই পর্বে। লোক সমাগম বেশি হওয়ার কারণেই যে এ ব্যবস্থা, তা সহজেই অনুমেয়। কথা হলো, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত বাহন নিশ্চিত না করলে ইজতেমার বিকেন্দ্রীকরণ যাতায়াতে ভোগান্তি কমাবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা প্রত্যাশা করি। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও নেওয়া চাই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। জানা গেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা নেতিবাচক প্রচারণা থাকলেও বিদেশি অতিথিদের এ দেশে আসার উৎসাহে ভাটা পড়েনি। এটা আমাদের জন্য সুখবর বটে। আমরা দেখছি, পর্যটক আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্ব ইজতেমায় আগত বিদেশিদের ঘিরে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলে এরও সুফল কিছুটা হলেও পাওয়া যেতে পারে। বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে দেশে কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ঘটে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ইজতেমা আয়োজনের পরিধি বিস্তারের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। বিভিন্ন পণ্যের নতুন বাজার অন্বেষণে এ আয়োজনকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো যায় কি না, তাও আমরা ভেবে দেখতে বলবো ব্যবসাসংশ্লিষ্টদের।
বলা ভুল হবে না, বিশ্ব ইজতেমার সঙ্গে কালক্রমে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। শুধু মানুষের নিরাপত্তা বা অন্যান্য বিষয়ের কথা বিবেচনায় রেখেই নয়, দেশের ভাবমূর্তি সুরক্ষায়ও এ আয়োজনকে নির্বিঘœ করা দরকার। একে ঘিরে বাংলাদেশ এরই মধ্যে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, সেটাকে সমুন্নত রাখতে হবে আমাদের স্বার্থে। এজন্য আয়োজনসংশ্লিষ্ট সবার সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আন্তরিকতাই আমরা আশা করি।
Add Comment