বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাঝে মধ্যে জনসংখ্যা হ্রাসের কারণেও কিছু কিছু দেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবরও জানা যায়। কিছু দেশ অধিক জনসংখ্যার চাপে ক্ষতিগ্রস্ত আবার কোনো দেশের অবস্থা বিপরীত। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে গোটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ চীন। প্রায় ১৪৫ লাখ জনগণ বাস করে চীনে। বাংলাদেশও জনসংখ্যার বাহুল্যতার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম রাষ্ট্রের তালিকায় ৮ম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। ১৯৬১ সালে যেখানে জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি, সেখানে জনসংখ্যা ৫ গুণেরও বেশিতে এসে পৌঁছেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হলো ১.৩০ শতাংশ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ জানুয়ারি বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দিবস পালন করা হয়। বলা হয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ঠিক নয়। একইভাবে পর্যাপ্তের অধিক জনসংখ্যা একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় যদি না ওই জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হয়। বিশালসংখ্যক জনগণকে সম্পদে পরিণত করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। সম্পদের অপ্রতুলতা, সুযোগের সংকট প্রভৃতি কারণে জনসম্পদ তৈরি অনেক সময় একটি রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে জনসংখ্যার একটি বিপুল অংশজুড়ে বয়স্ক ও শিশুরা থাকে। সুতরাং রাষ্ট্রের সব জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সবসময় সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠাও সবার পক্ষে সহজ ব্যাপার নয়। অতএব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনসংখ্যার সম্পদে পরিণত হওয়ার তুলনায় একটি দেশের জন্য বোঝায় পরিণত হয়। আবার অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রের জন্য নিজ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। প্রায় দেশই পরিবার পরিকল্পনা ও সচেতনতা সৃষ্টিকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হিসেবে গণ্য করে থাকে। বাংলাদেশও অধিক জনসংখ্যাজনিত সমস্যার ভুক্তভোগী। বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনাকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে। সরকার জনগণকে একটি সন্তান গ্রহণ এবং দুয়ের অধিক সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করে থাকে। যেহেতু অতিরিক্ত জনসংখ্যা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য বোঝাস্বরূপ; তাই জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ। যদি একে নিয়ন্ত্রণে রাখা না হয়, স্বয়ংক্রিয় গতিতে বাড়তে দেয়া হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে কোনো রাষ্ট্রই উন্নয়ন করতে সক্ষম হবে না। জনসংখ্যা সমস্যার শেকলেই আবদ্ধ থেকে যাবে।
সায়মা রুবাইয়াত খাতুন
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়