Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:02 pm

বিশ্ব পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়েছে মার্কিন পুঁজিবাজার। উচ্চ সুদহারের কারণে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত সোমবার শেয়ার বিক্রি বেড়ে যায়। শুরু হয় দরপতন। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারের অন্যতম প্রধান সূচক ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ এক হাজার ১৭৫ পয়েন্ট বা চার দশমিক ছয় শতাংশ কমে যায়। ২০১১ সালের আগস্টের পর এটিই সবচেয়ে বড় দরপতন। একে ‘ব্ল্যাক মানডে’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন বাজারের পতনে বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
মার্কিন বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রত্যাশার চেয়ে অর্থনৈতিক বাস্তবতা ভালো হওয়ার কারণেই হঠাৎ করে দরপতন ঘটেছে। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
সোমবার মার্কিন পুঁজিবাজারের অন্য প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি৫০০ ১১৩ দশমিক বা চার দশমিক ১০ শতাংশ কমে দুই হাজার ৬৪৮ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করে। নাসডাক সূচকও ২৪৩ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা তিন দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে পৌঁছায় ছয় হাজার ৯৬৭ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে।
বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। গত শুক্রবার মার্কিন শ্রম দফতর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিমাণ মজুরি ঘোষণা করে। সুদহার বাড়ানো হয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ রাখার দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণেই শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
আর্থিক উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান মুটলি ফুলের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কুয়ো বলেন, আশঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। ইতিবাচক খবরে ভারমাম্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে মার্কিন শেয়ারবাজারে। একইভাবে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইনটেলিজেন্সের কর্মকর্তা এরনি গিবস বলেন, এটা অর্থনীতির বিপর্যয় নয়। এই দরপতন দেখে মনে করার কারণ নেই যে, বাজারের অবস্থা ভালো নয়। প্রত্যাশার চেয়ে অর্থনৈতিক বাস্তবতা ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য বাজারের পুনর্মূল্যায়ন দরকার।
মার্কিন শেয়ারবাজারের দরপতনের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মঙ্গলবার বাজারের শুরুতে লন্ডনের এফটিএসই-১০০ সূচক ১৫৭ পয়েন্টে বা দুই দশমিক ১০ শতাংশ কমে সাত হাজার ১৭৫ পয়েন্টে পৌঁছায়। এছাড়া জার্মানির ডিএক্স ২৭৮ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ১৭ শতাংশ ও ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ১১৩ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ১৫ শতাংশ পড়ে পাঁচ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে ছিল। এছাড়া এফটিএসই এমআইবি, আইবিইএক্স ও স্টক্স ছয় হাজার সূচকও কমেছে যথাক্রমে দুই দশমিক ১৮, দুই দশমিক ১৩ ও দুই দশমিক ২১ শতাংশ।
মঙ্গলবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারেও ওই প্রভাব লক্ষ করা গেছে। জাপানের প্রধান সূচক নিক্কেই ২২৫ সূচক এক হাজার ৭১ পয়েন্টে বা চার দশমিক ৭৩ পয়েন্ট কমে ২১ হাজার ৬১০ পয়েন্টে ছিল। ভারতের প্রধান সূচক সেনসেক্স ১২০০ পয়েন্ট হারিয়েছিল লেনদেনের শুরুতে। হংকংয়ের হ্যাংসেং এক হাজার ৬৪২ পয়েন্ট বা পাঁচ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট কমে সূচক দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৬০২ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। চীনের সাংহাই সূচক ১১৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা তিন দশমিক ৩৫ পয়েন্ট কমে তিন হাজার ৩৭০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এছাড়া সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারও ছিল নি¤œমুখী।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে ধসের প্রভাবেই এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য বাজারেও পতন হয়েছে।