নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যে ধরনের কাঠামো দরকার এখন দেশে তা রয়েছে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জেনে, বুঝে ও পড়াশোনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগে ঝুঁকি রয়েছে। আবার এখানে বিনিয়োগ করায় মুনাফার সম্ভাবনাও বেশি। তাই বাজারের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব পরামর্শ দেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান ও বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় আমিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছি, মুনাফা করেছি, টাকাও হারিয়েছি। তবে ২০০২-০৩ সালের পর আর বিনিয়োগ করিনি। ব্যক্তিগত কারণেই আমি বিনিয়োগ করিনি।’
পুঁজিবাজারের দুটি ধসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ধস দুটি আমাদের খুব কাবু করে দিয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল আইনগত ত্রুটি ও নীতিমালার দুর্বলতা। তাই আমরা পুঁজিবাজারের আইনগত দুর্বলতা দূর করতে কাজ করেছি। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে কয়েক বছর সময় দিয়ে আইনগত উন্নয়নের পাশাপাশি নীতিমালায় সংস্কার এনেছি। এখন পুঁজিবাজারের আইনি অবকাঠামো অনেক উন্নত।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় ২৪ বছর পার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। নব্বইয়ের দশকে এবং ২০১০ সালে আমাদের পুঁজিবাজারে যে ধস হয়েছিল, তা বিনিয়োগকারীদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। সেই পরিস্থিতি যদিও কাম্য ছিল না, তবে সেখান থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা হয়েছে। চার বছর ধরে আমরা বিএসইসিতে অনেক সংস্কার করেছি, নীতিমালাগুলো কঠোর করেছি, যার কারণে সাধারণদের বিনিয়োগ আগ্রহ বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বুঝে-শুনে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের আইনে নানা সংস্কার আনা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে ডি-মিউচুয়ালাইজড করা হয়েছে। বিভিন্ন নীতিমালা করা হয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে আমাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে। তাই আগামীতে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর নানা ধরনের আইনগত সংস্কার করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। ফলে এখন আর আগের মতো ঘটনা ঘটবে না। তবে সেজন্য বিনিয়োগকারীদেরও প্রশিক্ষিত হতে হবে। এজন্যই সরকার শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।’ এর পাশাপাশি তিনি পুঁজিবাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসা, এসব প্রোডাক্টের ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশদভাবে বিবেচনা করা ও পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষাকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময় দেখেছি, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করছে। বাজারে বিনিয়োগের জন্যই তারা পড়াশোনা করে। আমাদের বিনিয়োগকারীদেরও পড়াশোনা করে বিনিয়োগ করা দরকার। কারণ দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনাদের বিনিয়োগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই না জেনে ও না বুঝে বিনিয়োগ করবেন না।’
অনুষ্ঠানশেষে একটি র্যালি বের করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
Add Comment