বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ

১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে এ দুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হবে। প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট মাতৃদুগ্ধ দিবস।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সপ্তাহ উদ্যাপন করে।
১৯৮১ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল কোড অব ব্রেস্ট সাবস্টিটিউট অনুমোদিত হয়। মায়ের দুধের প্রতি প্রাধান্য বা গুরুত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে এর বিকল্প পণ্যের প্রচার বন্ধে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়।
মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। এতে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেক কমে যায়। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে পরিপূর্ণভাবে। অপরদিকে মায়েদের স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। মাতৃদুগ্ধ পানের মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। গবেষণায় দেখা গেছে, জšে§র এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানো যায়।
মায়ের দুধে বিশেষ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়। মায়ের দুধে প্রায় ১০০ উপাদান রয়েছে। প্রতিটি উপাদানই শিশুর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকলেও এর সবটুকু শিশুর কাজে আসে না। এছাড়া গরুর দুধে মায়ের বুকের দুধের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি খাদ্য প্রোটিন বি-১২ থাকে, যার অধিকাংশই শিশুর জন্য অকেজো। মায়ের দুধে ৮৬ শতাংশ ক্যালরি শক্তি রয়েছে।
সন্তান জন্মদানের পর হলুদাভ ঘন যে দুধ বের হয়, একে শালদুধ বা কোলাস্ট্রাম বলে। এটি নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। শালদুধে অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধক উপাদান ও শ্বেতকণিকা থাকে। এ উপাদান শিশুকে বিভিন্ন রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে। এ দুধ শিশুর অপরিণত অন্ত্রকে পরিপক্ব করে। শালদুধ শিশুর পেটের প্রথম কালো পায়খানা বা মিকোনিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে। মিকোনিয়াম পেটে বেশি থাকলে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মায়ের দুধ খাওয়ানো অবশ্যই একটি অপরিহার্য অংশ। এতে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তি ও পরিবারের সঙ্গে বাবাকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও গড়ে তুলতে হবে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপযোগী পরিবেশ। ধনী, গরিব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ প্রত্যেক মা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে আগ্রহী ও সচেতন হবেনÑএটাই হোক বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবসের প্রধান লক্ষ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে, কারণ এই দুধ শিশুর পানির প্রয়োজনও মেটায়। ফলে মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ছয় মাস বয়স পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার দিতে হবে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত। জন্মের পরপর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের জরায়ু খুব দ্রুত সেরে ওঠে, মায়ের মৃত্যুঝুঁকিও কমে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও সবল হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে উদ্বুদ্ধ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে সর্বস্তরে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে দেশে এই সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক বৃদ্ধি ও সুস্থ থাকার জন্য মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই।

শিপন আহমেদ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০