মাহমুদুল হক আনসারী: প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে ১০ ডিসেম্বর ফিরে আসে। আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। সারা দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণও এ দিবস যথাযোগ্যভাবে, ভাবগম্ভীর পরিবেশ এবং মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে। মানবাধিকার হলো মানুষের অধিকার। জনগণের অধিকার, ধর্মীয় অধিকার, কথা বলার অধিকার, নাগরিক অধিকার, ভোটের অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার যাবতীয় অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে দেখা হয়।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের ওপরে আর কিছুই শ্রেষ্ঠ নেই। পৃথিবীর সব প্রাণীর মধ্যে মানুষই একমাত্র সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে এসেছে। মানুষ সৃষ্টিকর্তার একমাত্র প্রতিনিধি। মানুষকে সৃষ্টিকর্তা তার কতিপয় নিয়মকানুন, বিধিবিধান পৃথিবীতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। মানুষ স ষ্টার কাছে একজন খলিফা বা প্রতিনিধি। এ প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো পৃথিবীতে তারই ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটানো। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে নানা রং-বেরঙের সৃষ্টি দিয়ে সাজিয়েছেন। দুনিয়ার এক অঞ্চল ও এলাকার মানুষের সঙ্গে আরেক এলাকা বা অঞ্চলের মানুষের ভাষার মিল নেই। কথার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাজের সঙ্গে পার্থক্য থাকবে। খাওয়া রুচি নাম ইত্যাদির যথেষ্ট অমিল পাওয়া যাবে। একেক এলাকায় দেশে ভাগ ভাগ করে মানুষ শাসন করছে মানব সমাজকে। মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল রাখার জন্য পরিবার ও সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে পছন্দ করে না। তাই সমাজবদ্ধভাবে মানুষের বসবাস।
মানুষ চিন্তাচেতনায় ও বুদ্ধিতে গবেষণায় বহুদুর এগিয়ে। মানুষের বুদ্ধির ক্ষমতা অনেক দূরে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মানুষ আজ সমাজ ও রাষ্ট্রবদ্ধ জীব। মানুষের ইচ্ছা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সমাজ ও পৃথিবীকে শাসন করছে। মানুষ পৃথিবীকে নানা রঙে সাজিয়েছে। পেশায় মানুষ ভিন্ন ভিন্নভাবে সমাজে বাস করছে। একেকজন মানুষ একেক পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। দুনিয়ার মানুষ প্রাণে বেঁচে থাকার জন্য নানা ধরনের পেশা বেছে নিচ্ছে। লেখাপড়ার মাধ্যমে যোগ্যতা তৈরি করছে। যোগ্যতা অর্জন করে মানবজাতি পৃথিবীকে নানাভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির শেষ নেই। মানুষ করতে পারে না এমন কাজ নেই। মানুষ জয় করছে পৃথিবীকে। মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞান আজ পৃথিবীকে সহজ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতি অগ্রগতিতে মানুষ আজ চাঁদের দেশে ভ্রমণ করছে। গ্রহ আবিস্কার করছে। পৃথিবীর মানুষ চন্দ্র গ্রহে গিয়ে পৃথিবীর রহস্য খুঁজছে। অনেক এগিয়েছে পৃথিবীর মানুষ। মানুষ যে যে ধরনের মরণাস্ত্র বানাতে সক্ষম হয়েছে, তা দিয়ে পৃথিবীকে নিমিষেই ধ্বংস করে ফেলতে পারে। মানুষকে সৃষ্টিকর্তা মহাজ্ঞান দিয়ে পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তার অর্ডার বাস্তবায়ন করার জন্য। কিন্তু মানুষ সে নির্দেশ ভুলে গেছে। সৃষ্টিকর্তার সংবিধান মানুষের সামনে নেই। মানুষ পুরোপুরিভাবেই দুনিয়ায় এসে একজন সৃষ্টিকর্তা আছে সে বিষয়টি একেবারেই ভুলে গেছে। তাই মানুষ দুনিয়ার পৃষ্ঠে তার ইচ্ছা হুকুম রাজত্ব কায়েম করছে।
মানুষের ওপর মানুষের হুকুম প্রতিষ্ঠা করছে। মানবসৃষ্ট বিধান বাস্তবায়ন করছে। মানুষের হুকুম ও বিধান কায়েম করতে গিয়ে দেশে দেশে হানাহানি রক্তারক্তি, জুলুম আর নির্যাতন। ক্ষমতার দাপট, অস্ত্রের ব্যবহার, জুলুম আর নির্যাতনের শেষ নেই। একদেশ অপর দুর্বল দেশের ওপর জুলুম আর অত্যাচার। প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন থেকে দেশ পর্যন্ত কেড়ে নিচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশ। যুদ্ধে যুদ্ধে শেষ হয়ে যাচ্ছে মানবজাতি আর সভ্যতা। মানুষের চরিত্র আর চিন্তাচেতনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমাজকে নদীর সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। আদর্শ সমাজ খুঁজে পাওয়া এখন কঠিন একটি বিষয়। পৃথিবীর নানা প্রান্তরে মজলুম নির্যাতিত মানুষ মুক্তির জন্য ফরিয়াদ করছে। হে সৃষ্টিকর্তা আমাদের জালিমের শাসন থেকে বের করে আনুন। আমাদের মুক্তি দিন। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের জন্য ত্রাণকর্তা পাঠান। এমন পরিস্থিতি খারাপ অবস্থা পৃথিবীর দেশে দেশে বিরাজ করছে। মানুষ ও সমাজ জালিম ও জুলুমবাজের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছে না। মুক্তি পাচ্ছে না।
এভাবে গোটা পৃথিবীব্যাপী আজ মানুষের অধিকার একশ্রেণির মোড়লের হাতে বন্দি। জালিমের শক্তির কাছে মানুষ নির্যাতনের শিকার। এভাবে গোটা দুনিয়ায় আজ শান্তিপ্রিয় মানুষ জুলুম অত্যাচারের শিকার। ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় মানুষের নির্যাতন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা শোনা যায়।
কিন্তু কে কার কথা শুনছে। মানুষ আজ মহা স্বার্থপর হিসেবে পৃথিবীকে শাসন করছে। নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মজলুম মানুষের সংগ্রামের শেষ নেই। তবু তারা কোনো নিস্তার পাচ্ছে না। তাদের মুক্তির জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা কাজ করছে তাদের নাম মানবাধিকার সংগঠন। সারা দুনিয়ায় মানবাধিকার সংগঠনের বিস্তৃতি দেখা যায়। বাস্তবে পৃথিবীর কোথাও মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বাস্তব চিত্র দেখা যাচ্ছে না। আমাদের মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশেও মানবাধিকারের করুন পরিস্থিতি। এখানে মানুষের কোনো সঠিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। মানুষ পদে পদে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভোট, ভাত, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাক-স্বাধীনতার সবগুলো নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি রাখছি আজকের এ দিনে।
মুক্ত লেখক, চট্টগ্রাম