বিষমুক্ত বারোমাসি আম ও পেয়ারা

বিষমুক্ত বারোমাসি আম ও পেয়ারা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার শৌখিন চাষি গোলাম মওলা। শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ফল চাষ করে কোটিপতির তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন তিনি। ফল বাগান করেও থেমে থাকেননি তিনি। নতুন জাত তৈরির জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গোলাম মওলা তার ফল বাগানকেই গবেষণাগার হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এরই মধ্যে বারোমাসি পেয়ারা, কুল ও বাতাবিলেবুর নতুন জাত উৎপন্ন করে সফল হয়েছেন। তবে কৃষি গবেষণাগারের অনুমতি না পাওয়ায় এখনও তার উদ্ভাবিত জাতের নামকরণ করতে পারেননি। অবশ্য উদ্ভাবিত জাতের পেয়ারার নাম দিয়েছেন বাংলা পেয়ারা। তার উদ্ভাবিত বারোমাসি পেয়ারা, কুল ও বাতাবিলেবু চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় এলাকার অন্য চাষিরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা গোলাম মওলার উদ্ভাবিত চারা নিয়ে গিয়ে ফলের বাগান করছেন। বিষমুক্ত হওয়ায় এসব ফলের কদর রয়েছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে ও নাটোর মহিলা কলেজের কৃষিবিষয়ক শিক্ষক কৃষিবিদ গোলাম মওলা। তিনি বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা শেষে শখের বশে ২০০৪ সালে দুই হেক্টর জমিতে ফলের বাগান করেন। শুরুতে তিনি ঔষধি গাছের বাগান করেন। এরপর কুল। এ সময় তিনি গবেষণা করে আগাম জাতের টক-মিষ্টি কুল উদ্ভাবন করেন। পরবর্তী সময়ে আম, জাম, জামরুল, পেয়ারা, লিচু, কলা, কুল, ড্রাগন, অগ্নিশ্বর চাঁপাকলা, পারসিমন ও বারোমাসি কদবেলের বাগান করেন। বর্তমানে ২১ হেক্টর জমিতে বাগান রয়েছে তার।
উদ্ভাবিত এই বাংলা পেয়ারা গাছ লম্বায় তুলনামূলক বড়। ফলও আকারে বড়। এর একেকটির ওজন প্রায় এক হাজার ৪০০ গ্রাম। আট থেকে ১০ বছর বয়সী একটি গাছ থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ মণ পেয়ারা পাওয়া যায়। এই বাংলা পেয়ারা চারার চাহিদাও রয়েছে। প্রতিটি চারা তিনি ৫০ টাকায় বিক্রি করেন। তার বাগানের বাতাবিলেবু খুবই মিষ্টি ও আকারে বড়। বারোমাসি আমের মধ্যে আগাম জাতের আম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া যায়। আগাম জাতের কাঁচামিঠা আম এপ্রিলে পাওয়া যায়। সব ধরনের আম সাধারণত জুলাইয়ে উৎপন্ন হলেও তার বাগানে যেসব জাতের আম রয়েছে তা প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়। এসব আমের মধ্যে রয়েছে বারি-১১, সুইট কাটিমন, চোক আনান, শাহপুরী, গোরমতি, মধুমতি, বান্দিগৌরি, নাক ফজলি প্রভৃতি। থাইল্যান্ড থেকে আনা সুইট কাটিমন ও চোকআনান আম বছরে তিনবার পাওয়া যায়। পাঁচটি আমের ওজন এক কেজি।
তিনি বলেন, শরীফার পাঁচটি জাত নিয়ে কাজ করছি। পারসিমন ও লংগানের চাষ করেছি। থাইল্যান্ডের রাম্বুটান চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে, ফলটি নিয়ে গবেষণা করছি। রাম্বুটান ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। তাই গবেষণা করছি কীভাবে চাষ করা যায়। এরই মধ্যে বেশ কিছু চারা এনে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছি। ফল ছাড়া মিষ্টিকচু, কাঁটাবিহীন গোলাপ ফুল, খাটো জাতের সিয়াম গ্রিন ও সিয়াম ব্লু নামের নারিকেলের ৫৮টি গাছ আছে। তার বাগানে এলাকার অন্তত ৩০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষিবিদ গোলাম মওলার বাগানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফল রয়েছে। আমি প্রায়ই এই বাগান পরিদর্শন করি। নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করি। এ কারণে বিষমুক্ত ফল পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে এখানে।
স্থানীয় কৃষক মাহতাব আলী ও সমশের আলী বলেন, এখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফল ও ফলের চারা পাওয়া যায়। এখানকার বারোমাসি বাংলা পেয়ারার ফলন বেশি। তাই এই চারা রোপণ করেছি। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এখান থেকে ফল ও চারা নিয়ে যায়।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বলেন, কৃষিবিদ গোলাম মওলার বাগানে বারোমাসি আম, পেয়ারা, সিডলেস লেবু ও ড্রাগনসহ দেশি-বিদেশি অনেক নতুন ফলের গাছ রয়েছে। তিনি বাগানে জৈব সার ব্যবহার করেন।

এমএম আরিফুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০