রাজধানীর মতিঝিলে বিসিক ভবনে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ‘হেমন্তমেলা’। মেলায় নকশিকাঁথা, হাতে তৈরি পোশাক, তাঁত ও জামদানি শাড়ি, মধুসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। ঘুরে এসে মেলার বিস্তারিত জানাচ্ছেন জাকারিয়া পলাশ
রাজধানীর দুইপ্রান্ত। মতিঝিল থেকে আগারগাঁও। একপ্রান্ত আগারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। সেখানে দেশি-বিদেশি পণ্যের মাসব্যাপী মহাসমারোহ। আধুনিক, অভিজাত, চাকচিক্য ও জাঁকজমকে ভরপুর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর। অন্যদিকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ভবনেও চলছে মেলা। তবে একটু ভিন্ন রূপে। সেখানে সীমিত পরিসরে এ মাসের শুরুতে উদ্বোধন হয়েছে ‘হেমন্তমেলা ১৪২৩’। বিসিক ভবনের নিচ তলায় স্থান পেয়েছে ৬০টি স্টল। প্রতিটি স্টলের বরাদ্দ পেয়েছেন একেকজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই নারী। এছাড়া ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলছে ‘ত্রৈমাসিক কারুশিল্প প্রদর্শনী’।
রাজশাহীর নারী উদ্যোক্তা পারভিন আকতার অংশ নিয়েছেন হেমন্তমেলায়। তিনি এসেছেন নকশিকাঁথা নিয়ে। পাঁচ বছর আগে নকশিকাঁথা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন পারভীন আকতার। নাম দিয়েছেন রাজশাহী নকশিঘর। বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কাছে অর্ডার আসে। অর্ডার নিয়ে গ্রামের নারীদের কাজ ও নকশা বুঝিয়ে দেন। ক্রেতাদের পছন্দমাফিক নকশাও করেন। ৩৫ বর্গফুটের একেকটি কাঁথা বুননের জন্য কর্মীদের দেন দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা। মেলায় আনা তার সবচেয়ে সুন্দর নকশিকাঁথাটির দাম পাঁচ হাজার টাকা।
পারভীন বলেন, ‘বিসিকের স্টলটি বরাদ্দ পেয়েছি তিন হাজার টাকায়। এছাড়া রাজশাহী থেকে আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার অন্যান্য খরচও বহন করতে হচ্ছে।’ কয়েকজন ক্রেতা পেলে এ খরচ ওঠে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকার ফার্মগেট ও মনিপুরি পাড়ার বুটিক হাউজ শাহীন’স কালেকশনের তত্ত্বাবধায়ক শেয়ার বিজকে বলেন, এটি তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, টপসসহ নারীদের বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যায়।
কথা হয় উদ্যোক্তা আফরোজা’স কালেকশনের আফরোজার সঙ্গে। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও ফেনীতে তার শো-রুম আছে। তার অধীনে প্রায় ২৫ জন কারিগর কাজ করছেন। আফরোজার ভাষ্য, ‘আমার পারিবারিক সামান্য পুঁজি দিয়ে এ উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। এখনও কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিইনি।’ তবে সুযোগ পেলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের ইচ্ছা আছে তার।
মেলার আয়োজকরা জানান, বিসিকের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি রয়েছে। সে হিসেবে জানুয়ারি-মার্চ বর্ষাকাল, এপ্রিল-জুন শরৎকাল, জুলাই-সেপ্টেম্বর হেমন্ত ও অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়কে বসন্তকাল ধরা হয়। প্রতিবছর বিসিকের উদ্যোগে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে হেমন্ত মেলার আয়োজন করা হয়। তবে এ বছর একটু দেরিতে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলায় অংশ নেওয়া সোনারগাঁও মৌ খামারের স্বত্বাধিকারী মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘সীমিত পরিসরে নারায়ণগঞ্জে সরিষা, কালোজিরা, লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের মধু উৎপাদন করে বিক্রি করি। বিসিকের একটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়মিত মেলায় এসব পণ্য নিয়ে হাজির হই।’
মেলায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির পাশাপাশি বিসিকের নিজস্ব কারুশিল্পীদের তৈরি করা পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শনীও চলছে। এ প্রসঙ্গে বিসিকের পরিচালক (নকশা ও বিপণন) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিসিকে পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও শিল্পী এমদাদ হোসেনসহ বহু জ্ঞানীগুণী শিল্পী কাজ করেছেন। নতুন নতুন ডিজাইন উদ্ভাবনসহ ক্ষুদ্র, কুটির ও হস্তশিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিপণন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে বিসিক।’ বিসিকের প্রধান নকশাবিদ বশীর আহমেদ জানান, বিসিকের নকশা কেন্দ্রের মাধ্যমে ব্লক, বাটিক প্রিন্টিং, পুতুল তৈরি, স্ক্রিন প্রিন্টিং, প্যাকেজিং, বাঁশ-বেতের কাজ, পাটজাত হস্তশিল্প, চামড়াজাত পণ্য, ধাতবশিল্প, বুননশিল্প ও ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদি ১৩টি ক্ষেত্রে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৮ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৩২ হাজার ৫২০টি নকশা ও নমুনা উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী হয় বিভিন্ন মেলায়। এখন পর্যন্ত বিসিকের উদ্যোগে ১৭১টি মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
Add Comment