বিয়ের বয়সসীমা শিথিল রেখেই বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিয়ের বয়সসীমা শিথিল রেখেই বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ জাতীয় সংসদের পাস হয়েছে। বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবও কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। যদিও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি গতকাল সোমবার বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। এ আইনটি পাসের ফলে মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ ও ২১ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তার কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হলো। তবে বিশেষ প্রেক্ষাপট কী এবং কত কম বয়সে বিয়ে করা যাবে, তা আইনে স্পষ্ট করা হয়নি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বলা হয়েছিল, এগুলো আদালত নির্র্ধারণ করবেন।

আইন পাসের প্রক্রিয়ার সময় ওঠা প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশেষ বিধানের এ সুযোগ যে কেউ চাইলেই পাবে না। কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার ক্ষেত্রে পিতামাতা বা বৈধ অভিভাবক এবং আদালতের সম্মতি লাগবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কেউ বিয়ে দিতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, আলোচিত এ বিলটি গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সংসদে উত্থাপিত হয়। পরে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান শুধু মেয়েদের জন্য নয়, ছেলেদের জন্যও প্রযোজ্য করার প্রস্তাব করেছে। এর আগে মন্ত্রিসভা অনুমোদিত প্রস্তাবিত আইনে এ বিধান শুধু মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। সংসদীয় কমিটি ৯ ফেব্রুয়ারি বিলের প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর দেশের নারী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিলটি পাস না করতে বাংলাদেশের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবি সামাজিক ক্ষেত্রে নানা সূচকে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ বাল্যবিয়ে রোধের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। বয়স কমানোর বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে উৎসাহিত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তা বাতিলের দাবি তুলেছিল   দেশি-বিদেশি মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো।

এদিকে সংসদে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’ এখানে সংসদীয় কমিটি ‘কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ এবং ‘মাতা-পিতা’র সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি  যোগ করেছে।

প্রস্তাবিত আইনের বিশেষ এ বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ উৎসাহিত হবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি জবাবে বিলটি সংসদে তোলার এক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞান। সমাজবাস্তবতার কথা বিবেচনায় রেখেই এ আইন করা হচ্ছে।

এদিকে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এদিকে বিলসম্পর্কিত নোটিসের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বিরোধী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, কারও বয়স ১৮ হলে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হবেন। প্রাপ্তবয়স্করা ভোটার। কিন্তু ১৮ বছরের আগে কেউ ভোটার হতে পারেন না। সুতরাং এই আইনে প্রাপ্তবয়স্কের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।’ ফখরুল ইমাম প্রাপ্তবয়স্কের সংজ্ঞার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন। তবে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এ প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০