মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ারে ঝুঁকি বাড়ছেই। এক বছরের ব্যবধানে এসব কোম্পানির শেয়ারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের চার ধরনের ক্যাটেগরির মধ্যে ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ডিএসই সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
ডিএসই থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘বি’ ক্যাটেগরির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের গড় পিই-রেশিও বা শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২। গত বছর একই সময়ে এ সময়ে যা ছিল ২৭ দশমিক ৭৩। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এসব প্রতিষ্ঠানের পিই-রেশিও বেড়েছে ১৫। ফলে ঝুঁকিও বেড়েছে।
‘বি’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের প্রধান কারণ, প্রতিষ্ঠানের ক্যাটেগরি পরিবর্তন হবে এমন ভাবনা। মূলত এ কারণেই ওইসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী। তারা ভাবেন, ক্যাটেগরি পরিবর্তন হলেই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর অনেক বেড়ে যাবে। সে কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। আর এর জের ধরে বাড়তে থাকে মার্কেট পিই-রেশিও। এক সময় শেয়ার হয়ে ওঠে অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
তাদের মতে, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি রয়েছে সমস্যাও। এখানে সম্ভাবনার চেয়ে সমস্যাই বেশি। সংশ্লিষ্টদের যুক্তি, যে কোম্পানিগুলো আর্থিক বিচারে ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানির চেয়ে দুর্বল তাদের ঠাঁই হয় ‘বি’ ক্যাটেগরিতে। আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে এদের লভ্যাংশ প্রদানের হারও কম। ফলে যে কোনো সময় এসব কোম্পানি ‘বি’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ এসব কোম্পানিতে লাভের চেয়ে লোকসান বা ঝুঁকির শঙ্কাই বেশি।
জানতে চাইলে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ার কেনার সময় বিনিয়োগকারীদের উচিত শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত দেখে নেওয়া। কারণ যে শেয়ারের পিই-রেশিও যত কম সে শেয়ার তত ঝুঁকিমুক্ত। এ বিষয়টি সবার মাথায় রাখা উচিত। তিনি বলেন, যেসব শেয়ারের পিই-রেশিও বেশি সেই শেয়ার পরিহার করে ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ। পুঁজির নিরাপত্তায় এর চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আর হতে পারে না।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পিই রেশিও ১৫-এর মধ্যে থাকলে সে কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ভাবা হয়। পিই ১৫-এর ওপরে গেলে ক্রমেই বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। ২০-এর ওপর পিই-রেশিও চলে গেলে তারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই বিনিয়োগ ঝুঁকি এড়াতে কম পিইসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে যেসব কোম্পানির পিই ৪০-এর ওপরে চলে যায় সেসব শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কারণ এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ঝুঁকিতে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে তালিকাভুক্ত নতুন কোম্পানি বা ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত ওঠে এসেছে ২২ দশমিক ৮৯তে। এছাড়া ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানির পিই-রেশিও ১৪ দশমিক শূন্য চার ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির পিই-রেশিও দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৯।

Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:01 pm
‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ারে ঝুঁকি বাড়ছেই
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: