Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:15 pm

‘বি’ ক্যাটেগরির ৩৫% ধসের পর তালিকাভুক্ত

নাজমুল ইসলাম ফারুক : প্রত্যেক বছর নতুন নতুন কোম্পানি বাজারে আসছে। কোম্পানিগুলোর কোনোটি প্রিমিয়াম নিয়ে, আবার কেউ অভিহিত মূল্যে বাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তবে ২০১০ সালের ধস-পরবর্তী সময়ে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে সাতটিই ‘বি’ ক্যাটেগরিতে স্থান পেয়েছে। তাদের মধ্যে দুটি অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উদ্যোক্তারাই লাভবান হয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভালো কোম্পানি বাজারে আসার অনুমোদন দিলে এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলে এমনটি হতো না বলে মনে করছেন তারা।

তথ্যমতে, ইয়াকিন পলিমার ২০১৬ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বাজারে দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে মেশিনারিজ ক্রয়, কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। অথচ কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পরের বছরই ক্যাটেগরি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। গত দুবছর ধরে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযাযী ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে মাত্র তিন পয়সা; আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২৪ পয়সা। গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বরÑএ ছয় মাসে ইপিএস হয়েছে ১৫ পয়সা; আগের বছর একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয় তালিকাভুক্তির পর থেকেই কমছে।

অপরদিকে দ্য পেনিনসুলা চিটাগং ২০১৪ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কোম্পানিটির প্রত্যেক শেয়ারের নির্দেশক মূল্য ছিল ৩০ টাকা। এর মধ্যে প্রিমিয়াম ছিল ২০ টাকা। বাজারে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১৬৫ কোটি টাকা তুলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ নেয় ১১০ কোটি টাকা। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে হোটেল সংস্কার ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের সন্নিকটে আরও একটি নতুন হোটেল নির্মাণসহ ব্যাংকঋণ পরিশোধের কথা ছিল। ২০১৭ সালে অর্থাৎ তালিকাভুক্তির তিন বছর পর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে নেমে আসে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ২১ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। অথচ বাজারে তালিকাভুক্তির পর লেনদেনের প্রথম দিন কোম্পানির শেয়ার ৩৬ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছিল। সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩২ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ৬৫ পয়সা।

শুধু ইয়াকিন পলিমার, দ্য পেনিনসুলা চিটাগং নয়, ২০১০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মোট সাতটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। অর্থাৎ ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করা কোম্পানির ৩৫ শতাংশই হলো গত সাত বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত। আর বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে ২০টি প্রতিষ্ঠান অবস্থান করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝেমধ্যে পুঁজিবাজারে এমন কিছু কোম্পানি আসে যেগুলো খুবই নি¤œমানের, দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন। তাছাড়া কিছু কোম্পানি মিথ্য তথ্য দিয়ে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এসব কোম্পানি আয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে লভ্যাংশের হারও কমে যায়। এতে কোম্পানিগুলোর ক্যাটেগরি পরিবর্তন হয়। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা; তবে উদ্যোক্তারাই বেশি লাভবান হন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়ার আগে আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। তাছাড়া দুর্বল কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। এতে ভালো কোম্পানি বাজার আসবে। যা বাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা।

এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আসলে যেসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে আসার পরপরই ‘বি’ বা ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে স্থানান্তরিত হয়, সেগুলোর অধিকাংশ খুবই দুর্বল। অথচ বাজারে আসার আগে তারা প্রসপেকটাসে কত ভালো নোট দিয়ে আসছে। এসব কোম্পানি থেকে আসলে উদ্যোক্তারাই বেশি লাভবান হয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি। যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে বাজারের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

জানা গেছে, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড ২০১৪ সালে বাজারে আসে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে দুই কোটি ৭৫ লাখ শেয়ার ছেড়ে মোট ২৭ কোটি ৫০ টাকা তুলে নিয়েছে। বাজার থেকে নেওয়া অর্থ দিয়ে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল। লেনদেনের শুরুতে কোম্পানির শেয়ার ৪৫ টাকা ৩০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছিল। অথচ দুবছর পরই কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে নেমে এসেছে। সর্বশেষ কোম্পানির শেয়ার ১৬ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) লিমিটেড ২০১৩ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে তিন কোটি ৪০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে ৩৪ কোটি টাকা তুলে নেয়। কোম্পানিটির শেয়ার বাজারে লেনদেনের প্রথম দিন ৪৮ টাকা ৫০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। অথচ দুবছর ধরে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অর্থাৎ ছয় টাকা ৯০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ২০১৩ সালে বাজারে আসে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। লেনদেন শুরুর দিন কোম্পানির শেয়ার ১৯ টাকায় বেচাকেনা হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করে। কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। গতকাল সর্বশেষ কোম্পানির শেয়ার ৯ টাকা ৪০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। এদিকে সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১১ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের দুই কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২৬ কোটি টাকা তুলে নেয়। কোম্পানিটি বাজারে আসার প্রথম দিন ৬৮ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। অথচ গত দুবছর ধরে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ২৫ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অপরদিকে ২০১০ সালে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের তিন কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়। কোম্পানিটি বেশ কয়েক বছর ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করলেও গত দুবছর ধরে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে।