নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছু কোম্পানি নি¤œমানের বীজ সরবরাহ করায় কৃষকের পাশাপাশি দেশে ফসলের মোট উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি উৎপাদনের মূল উপকরণ হলো বীজ। ভালো ফলন ও উৎপাদনশীলতার জন্য মানসম্পন্ন বীজ অপরিহার্য। কিন্তু নি¤œমানের বীজের বিষয়ে এখনও অনেক অভিযোগ আসছে। মাঠ থেকে খবর পাই যে, চারা অর্ধেক গজায়নি। এখনও কিছু কোম্পানির প্রতারণা করার প্রবণতা আছে। বীজের মানের বিষয়ে তাদের কোনোরকম ছাড় দেয়া হবে না।’
কৃষক যাতে শতভাগ আস্থার সঙ্গে নির্দ্বিধায় বীজ ব্যবহার করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও ‘বাংলাদেশ সীড অ্যাসোসিয়েশন’-এর যৌথ উদ্যোগে তিন দিনের ‘বাংলাদেশ সীড কংগ্রেস, ২০২৩’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী।
বীজ কোম্পানিগুলোকে সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কৃষকেরা নি¤œমানের বীজ কিনে প্রতারিত হয়। এতে একদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ বিষয়ে বীজ অ্যাসোসিয়েশনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। বীজের মানের বিষয়ে কৃষকের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বীজ নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ভালো মানের বীজ উৎপাদনের ফলে কৃষিতে এরই মধ্যে শতকরা ফলন বেড়েছে আট থেকে ১০ ভাগ। আরও ভালো বীজ দিতে পারলে বছরে ধানের উৎপাদন ২১ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ধানের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার টনের বেশি।
কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, ‘বিগত ১৪ বছরে সার-বীজের কোনো সংকট হয়নি বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাপী সারের দাম চারগুণ বৃদ্ধি পেলেও সরকার দেশে সারের দাম বাড়ায়নি। আগের চেয়ে চারগুণের বেশি ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে কৃষিতে। বীজের দামও বাড়ানো হয়নি। কৃষি উৎপাদন বজায় রাখতে আগামীতেও সার-বীজের দাম বাড়াবে না সরকার।’
আমদানি করা বীজের মান নিয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব জাত দেশের জন্য কতটুকু উপযোগী, কোনো রোগব্যাধি বা জীবাণু আছে কি না, কৃষককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কি নাÑএসব বিষয় শক্তভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জ্যান বেলি, এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন, এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সীড অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মনিশ প্যাটেল, ইন্টারন্যাশনাল সীড ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মাইকেল কেলার, বাংলাদেশ সীড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গতকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত এ মেলায় দেশি-বিদেশি ও সরকারি-বেসরকারি ৬০টি স্টল ও ১৩টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলবে।