Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 2:53 pm

বুড়িমারীর পাথরভাঙা শ্রমিকরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

জেআই সমাপ্ত, লালমনিরহাট: চিকিৎসার অভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত পাথর ভাঙা শ্রমিকরা। এসব রোগী করোনা দুর্যোগকালে আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার শতাধিক পাথর ভাঙা শ্রমিক এ পর্যন্ত মারা গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা যায়, এ রোগে আক্রান্ত শ্রমিকরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, হারিয়ে ফেলছেন কাজ করার শক্তি। খেয়ে না খেয়ে তাদের বাঁচতে হচ্ছে মরণযন্ত্রণায়। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে ছুটতে হচ্ছে সাহায্যের জন্য। কিন্তু মিলছে না কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। অনেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ করেছেন শেষ সম্বলটুকুও।

সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত পাথরভাঙা শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) বলেন, দরিদ্রতার কারণে ১১ বছর আগে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরভাঙা শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করি। প্রায় পাঁচ বছর কাজ করার পর সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হই। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বল বসতভিটার আট শতাংশ জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যের জমিতে।

অপরদিকে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত পাথরভাঙা শ্রমিক শাহিন ইসলাম (৪২) বলেন, প্রায় ১৪ বছর আগে যখন পাথর ভাঙার কাজ শুরু করি তখন এ রোগের নামই শুনিনি। কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই পাথর ভাঙার কাজ করতে গিয়ে আজ এ রোগে ভুগতে হচ্ছে। আমি আট বছর ধরে এ রোগে ভুগছি। এ রোগে মারা গেছেন আমার কয়েকজন বন্ধু। আমার অবস্থাও ভালো নেই, চিকিৎসা করাতে পারছি না।

একই অবস্থা পাথরভাঙা শ্রমিক রেজাউল হক (৩৮), রহিমুদ্দিন (৪৬), আলতাফ হোসেন (৪৮) বামনদল গ্রামের নূর ইসলাম (৪৮), কামারেরহাট গ্রামের আফাজ উদ্দিনসহ আরও অনেকের। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা। কাজ করতে না পারায় তাদের পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, সিলিকোসিস রোগে গত ছয় থেকে সাত বছরে ৬৭ জন পাথরভাঙা শ্রমিক মারা গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদে তালিকাভুক্ত ১০০ পাথরভাঙা শ্রমিক আছেন, যারা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন। তালিকার বাইরেও অনেক পাথরভাঙা শ্রমিক আছেন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

লালমনিরহাট আরডিআরএস বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. বিপুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। অনেকে নিয়মিত চিকিৎসা নিলেও অধিকাংশ রোগী অনিয়িমিত রয়েছেন। টাকার অভাবে অনেকে ওষুধ কিনতে না পেরে চিকিৎসা নিয়মিত করতে পারছেন না।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলার সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি রয়েছে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত পাথরভাঙা শ্রমিকদের। সিলিকোসিসে আক্রান্তরা শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হন। তাই তারা যদি করোনায় আক্রান্ত হন তাহলে কোনো রক্ষা নেই। সিলিকোসিস আক্রান্ত ও সিলিকোসিস ঝুঁকিতে থাকা পাথরভাঙা শ্রমিকদের আমরা বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছি।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি দল সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত পাথরভাঙা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও জীবনযাপনের জন্য আর্থিক সহায়তার প্রস্তুতিও রয়েছে।’