Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:38 pm

বুধবার থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিম পাড়ার মৌসুম হওয়ায় ‘মা’ মাছ সংরক্ষণে আগামী বুধবার থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকছে। গতকাল রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে ‘মা-ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৯’ উপলক্ষে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়।
এ নিষেধাজ্ঞার কারণ ব্যাখ্যা করে গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেছিলেন, প্রধানত আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন পর্যন্ত সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। তিনি বলেন, সারা বছর ডিম ছাড়লেও ৮০ শতাংশ ডিম এ সময় ছাড়ে।
এ সময় ইলিশ ধরার ওপর নির্ভরশীল জেলেদের খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হবে জানিয়ে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাছ ধরায় বিধিনিষেধের ফলে ইলিশ মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। মৎস্য খাতের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ইলিশ মাছের যে আকাল ছিল, এখন আর তা নেই।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ায় এখন দেশের শতাধিক উপজেলার নদীতেও তা পাওয়া যাচ্ছে বলে এ বছর জাতীয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে এক কর্মশালায় জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৭৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানানো হয় কর্মশালায়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরের সঠিক সময় নির্ধারণ করা খুবই জটিল বিষয়। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় অনেক সময় তারিখের হেরফের হয়। এজন্য আগে ইলিশ ধরা সাত দিন বন্ধ থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৪ দিন এবং সর্বশেষ ২২ দিন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ পরিবহন, প্রদর্শন, গুদামজাতকরণ ও বাজারে বিক্রি করা যাবে না। করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ সময় মৎস্য মন্ত্রণালয়, কোস্ট গার্ড ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নদীতে অভিযান পরিচালনাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সময় সাগর থেকে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। যদিও ইলিশ সারা বছরই ডিম ছেড়ে থাকে। তবে উল্লিখিত সময়ে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ে। আর তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন এ ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলার নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেসব স্থানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। বিশেষ করে ইলিশের অভয়ারণ্যগুলোয় এ নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়িভাবে বহাল থাকবে।
এদিকে, ইলিশের জন্য মোট ছয়টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে: ভোলার চরইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হার্ডপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলায় মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার।
এছাড়াও আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাঙ্গলী ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বরিশালের আশেপাশের ৮২ কিলোমিটার নদীপথ নিয়ে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছয়টি অভয়াশ্রমের বাইরে দেশের উল্লেখযোগ্য নদীতে এ সময় কেবল ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ ইলিশ ধরার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় কোস্ট গার্ডসহ নদীর তীরবর্তী জেলা প্রশাসন নদীগুলো কঠোর মনিটরিং করবে। এছাড়া, মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন।
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা যতদিন মাছ ধরতে সাগরে যেতে পারছেন না, ততদিন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৭০৯ কার্ডধারী জেলের প্রত্যেকে ২০ কেজি করে চাল পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশ। কয়েক বছর যাবৎ বছরে পাঁচ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদনের বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে। আমরা উৎপাদনের এ পরিমাণ আরও বাড়াতে চাই। ইলিশ জাতীয় মাছ। বরাবরের মতো এবারও ইলিশের প্রজনন যাতে বাড়ে এবং সবাই যেন ইলিশ খেতে পারেন, সেজন্য ডিম ছাড়ার সময় ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হবে।’