নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) সক্ষমতা উন্নয়নসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলো অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ বর্তমানের ছয় মাসের পরিবর্তে ১০ মাসে উন্নীত করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ছয় হাজার ৬৫১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল পাঁচ হাজার ২১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭৯৮ কোটি তিন লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণ ৬৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এসব তথ্য জানান সাংবাদিকদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারী, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম ও ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ।
গতকাল অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৯টি প্রকল্প নতুন ও একটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘বরিশাল (দিনেরারপুল) লক্ষ্মীপাশা-দুমকি সড়কের (জেড-৮০৪৪) ২৭তম কিলোমিটারে পাণ্ডব-পায়রা নদীর ওপর নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি এক হাজার ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘মধুপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪০১) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি এক হাজার ১০৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, নয়ারহাট) নদীবন্দর নির্মাণ’ প্রকল্পটি ২৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘চিলমারী নদীবন্দরটি ঐতিহ্যবাহী বন্দর। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর আসামের সঙ্গে সংযোগ ভেঙে যাওয়ায় এর গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। এখন আবার নতুন করে ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বন্দরটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।’
তিনি জানান, এ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিখ্যাত একটি গান আছে না, হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে… একটি গান আছে না। কেউ কি বলতে পারবেন?’ এ সময় তিনি গানটি গেয়ে ওঠেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ‘বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের আধুনিকায়ন
ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পটি ২১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে দেশেই মেডিকেল শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন ব্রাহ্মণগ্রাম-হাটপাঁচিল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ এবং বেতিল স্পার-১ ও এনায়েতপুর স্পার-২ শক্তিশালীকরণ কাজ’ প্রকল্পটি ৬৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন ব্যারাজ, বুড়িবাঁধ ও ভুল্লিবাঁধ সেচ প্রকল্পসমূহ পুনর্বাসন, নদীতীর সংরক্ষণ ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৯৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
অনুমোদন দেয়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে এমএ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলু রপ্তানি করতে টিস্যু কালচারের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেরও টিস্যু কালচার বাড়ানোর কথা বলেছেন। এছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেশি করে ধানের সাইলো নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ (প্রথম ৩০টি সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্প)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এক হাজার ৪০০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক হাজার ৩০৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে এটি।
সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্পটি হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বিপিএটিসি’র প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প। এটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পটির খরচ ৩৪৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ২০৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এর মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সরকারি কর্মকাণ্ডে এক-দুই মাস বা ছয় মাসের প্রশিক্ষণ না দিয়ে ১০ মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে উন্নতমানের গবেষণার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।