কোন দেশের স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার সেরা? উঁহুঁ, সে বিতর্কে না গিয়ে আসুন জেনে নিই কোন দেশে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড না খেয়ে ফিরে আসার মানে জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা মিস করা! আজ বুবুর আয়ামের কথা জানাচ্ছেন হাসানুজ্জামান পিয়াস
বুবুর আয়াম এক ধরনের ইন্দোনেশিয়ান ‘চিকেন কঞ্জি’ (মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি চালের ক্ষীর বা পুডিংবিশেষ)। জনপ্রিয় এ খাবারটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। মুরগির মাংসের টুকরো ও চালের কঞ্জি অর্থাৎ ক্ষীরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজি কিংবা মসলা যেমন পেঁয়াজের কালি, শ্যালট (এক ধরনের পেঁয়াজ), সেলারি (এক ধরনের শাক), টংকায় (সংরক্ষিত লবণাক্ত সবজি), ভাজা সয়াবিন, চাইনিজ ক্রুলার, লবণাক্ত ও মিষ্টি সয়াসস, কখনও মুরগির মাংসের হলুদ ঝোল, কেরুপুক (ইন্দোনেশিয়ান স্টাইল ক্র্যাকার্স) সহযোগে বুবুর আয়াম তৈরি হয়। এটি সকালের নাস্তা হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ট্রাভেলিং ভেন্ডর, স্থানীয় ছোট দোকান, ফাস্টফুডের দোকান, এমনকি পাঁচতারকা হোটেলেও পরিবেশন করা হয় বুবুর আয়াম। ট্রাভেলিং ভেন্ডরে বিক্রেতারা সকালে আবাসিক এলাকার রাস্তায় বিক্রি করেন।
সম্ভবত ‘চায়নিজ চিকেন কঞ্জি’ থেকে বুবুর আয়ামের উৎপত্তি। মূলত টংকায়, চাইনিজ ক্রুলার ও সয়াসসের ব্যবহার প্রমাণ করে এটি চায়নিজ খাবার থেকে এসেছে। এতে প্রচুর পরিমাণ পোলট্রি প্রডাক্ট, যেমন মাংসের টুকরো দেওয়া হয়। কখনও আবার সেদ্ধ ডিম, গিলা-কলিজা যোগ করা হয়। কয়েক পদের বুবুর আয়াম দেখা যায় বুবুর আয়াম ব্যানডং ও সুকাবুমি। এগুলো পশ্চিম জাভা থেকে এসেছে।
ট্রাভেলিং ভেন্ডর ও স্থানীয় ছোট দোকানের বুবুর আয়ামের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেল ও ফাস্টফুডের রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ বেশ পার্থক্য লক্ষ করা যায়। কারণ এটি সব সময় সফ্ট টেক্সার ও গরম তাপমাত্রায় পরিবেশন করা হয়। ইন্দোনেশিয়ান সংস্কৃতিতে একে বলা হয় ‘কমফোর্ট ফুড’। সফ্ট টেক্সার চালের কঞ্জি ও হাড়হীন ছোট টুকরোর মাংস-সহযোগে তৈরি হয় বলে বুবুর আয়াম বাচ্চা কিংবা বৃদ্ধরা আরোগ্য লাভের জন্য খেতে পারেন।
জনপ্রিয়তার জন্য ম্যাকডোনাল্ড’স ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার এশিয়া-ইন্সপায়ারড ফাস্টফুড মেন্যুতে স্থান পেয়েছে বুবুর আয়াম। এমনকি ইন্দোনেশিয়ার কেএফসিতেও খাবারটি পাওয়া যায়। সব রেসিপিতে চাল ব্যবহার করা হলেও নতুন এক ধরনের বুবুর আয়ামে চালের পরিবর্তে ওট ব্যবহার করা হয়। একে ‘বুবুর আয়াম হ্যাভারমাট’ বলা হয়। প্রচুর চাহিদার কারণে বর্তমানে মুদি দোকানে ইনস্ট্যান্ট ফুড হিসেবে বুবুর আয়াম বিক্রি হয়, যার মধ্যে কেবল সামান্য গরম পানি দিলেই খাওয়ার উপযোগী হয়। যারা ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমণে যেতে চাইছেন, তারা চেখে আসতে পারেন জনপ্রিয় এ খাবারটি।
