নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপকূলীয় সাত জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন। গতকাল সচিবালয়ে প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তবে এতে ফসল ছাড়া বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দেশের ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যথাসময়ে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২২টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এনামুর রহমান বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলা জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সাত জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোক সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে সাইক্লোন সেন্টারসহ উপকূলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সাইক্লোন সেন্টারে দুই হাজার প্যাকেট করে শুকনো খাবার ও নগদ পাঁচ লাখ করে টাকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এটার যে গতি ও যেদিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। গতি আরও বাড়লেও যে প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে ফসল ছাড়া বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে এটি আঘাত হানতে পারে। এজন্য ঝড়ের ১৪ ঘণ্টা আগে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়, যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী জরুরি ব্যবস্থা নিতে ৮ থেকে ১৬ নভেম্বর উপকূলের সব জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঝরছে বৃষ্টি। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় গতকাল ছুটির দিনেই দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো জরুরি সভা করেছে। শেয়ার বিজ প্রতিনিধিরা জানান, দুর্যোগ-পরবর্তী চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠনসহ দুর্যোগকালীন ও সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসনগুলো। প্রস্তুত করা হচ্ছে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মো?কাবিলায় ব?রিশালে জেলা প্রশাসন ২৩২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। এগুলোয় এক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক?মি?টির জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, রে?ড? ক্রিসেন্টসহ বি?ভিন্ন বেসরকা?রি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা?হিনী, ফায়ার সা?র্ভিস ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছেন।
অজিয়র রহমান বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০০ মে?ট্রিক টন চাল, শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। আমরা ঘূ?র্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেখে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে সবার জন্য বলবÑকেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে অনিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন।’
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক সভায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় প্রশাসনকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইম বিল্লাহর সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়। এতে জানানো হয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০৯টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব উপজেলা প্রশাসনকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও প্রস্তুত করা হয়েছে। নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত সব ট্রলারকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় উপজেলা পর্যায়েও প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সব সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানানন, উপকূলীয় এ জেলাটিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে সকাল থেকেই। দুর্যোগ মোকাবিলায় গতকাল সকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৪০৩টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া দুর্যোগ-পরবর্তী চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠনসহ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। মাছ ধরার ট্রলার ও জেলে নৌকাগুলো উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলার সব নদীপথে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।