দেশের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণের ইচ্ছা রয়েছে পিয়ারুল ইসলামের। কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতায় নয়, তার ইচ্ছে নিজের সামর্থ্যে যা কুলোয়, তা দিয়েই মৃত্যু অবধি বৃক্ষরোপণ করবেন তিনি।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামার উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার মৃত আলাউদ্দিন মালিথার ছেলে পিয়ারুল। পেশায় কৃষক। স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের দুই বিঘা জমির চাষাবাদ আর বাড়ি ভাড়া। এ দিয়ে চলে তার সংসার।
বৃক্ষরোপণের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। আবার নিজের টাকায় বীজ কিনে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশে, খালের কিনার, এমনকি রেললাইনের ধারে বৃক্ষরোপণ করেন। মূলত দেশে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থান ঘুরে তালের বীজ সংগ্রহ ও রোপণ করেন তিনি। তার এ মহতী উদ্যোগে শামিল হয়েছেন আরও অনেকে। মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাচ্ছেন এ ব্যাপারে।
সরেজমিনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ৫০০ তালবীজ স্থানীয় এক কৃষকের সহযোগিতায় রোপণ করছেন পিয়ারুল। পিয়ারুল বলেন, প্রায় দুবছর ধরে তালবীজ রোপণ করছি। গত বছর প্রায় এক হাজার বীজ সংগ্রহ করে নিজেই রোপণ করেছি। এ বছর দুই হাজার বীজ রোপণের ইচ্ছা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪০০ তালবীজ রোপণ করেছি। তবে মিরপুর উপজেলায় এবার প্রথম রোপণ করছি।
পিয়ারুল আরও বলেন, বিভিন্ন গ্রামে তালবীজ রোপণ করে চলেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চেষ্টা করি মাঠের মধ্যে রোপণ করতে। কারণ, ফাঁকা মাঠে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। এতে অনেক প্রাণহানি হয়। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাজবীজ সংগ্রহ করি। এছাড়া বিভিন্ন ফলের আড়ত থেকে পচা তাল সংগ্রহ করে প্রথমে তা সংরক্ষণ করি। এরপর ভাদ্রের শেষ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বীজ রোপণ করি। এ বছর তালবীজ সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের টাকায়ও কিছু বীজ কিনে রোপণ করেছি।
দেশ ও দশের জন্য বৃক্ষরোপণ করে যাবেন পিয়ারুল। এজন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চান না তিনি। এমনকি এসব গাছ বেড়ে উঠলে কোনো দাবিও করবেন না তিনি।
ধুবইল ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মামুন বলেন, পিয়ারুল ইসলামের তালবীজ রোপণ নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। তিনি আমাদের এলাকায়ও রোপণ করেছেন। গাছগুলো বেড়ে উঠলে একদিকে যেমন পরিবেশের উপকার হবে, অন্যদিকে বজ্রপাত নিরোধেও কাজে লাগবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমাদের বজ্রনিরোধক যে যন্ত্র ছিল, এটি উঠিয়ে নেওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। এ থেকে বাঁচতে তালগাছের বিশেষ প্রয়োজন। তাই বেশি করে তালবীজ রোপণ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে উপজেলার প্রতিটি ব্লকে ৩০০ তালবীজ রোপণ করেছি। উপজেলার সব ইউনিয়নে ৯০০ করে তালবীজ রোপণ করা হচ্ছে।
কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
মন্তব্য