বৃদ্ধাশ্রম না হোক বাবা-মায়ের শেষ আশ্রয়

‘ছেলে আমার মস্ত বড় অফিসার

মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার,

নানা রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি

সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি।’”

নচিকেতা চক্রবর্তীর এই গানের সঙ্গে যেন মিলে যায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা প্রতিটি মা-বাবার জীবনকাহিনি। যারা সন্তানদের জন্য নিজের জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন সফলতার শীর্ষে, যারা একটা সময় ভাবতেন জীবনের শেষ সময়টা হবে অত্যন্ত আনন্দময়, তাদের বাস্তব জীবনের চিত্র একদম ভিন্ন। বৃদ্ধাশ্রমের কথা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে একাকী নিঃসঙ্গ এক জীবন্ত ছবি, যার চোখে-মুখে ভেসে বেড়ায় অনেক স্মৃতি। কিন্তু আদৌ কি একা থাকার কথা ছিল তার? যে মা সন্তানের অসুখ হলে সারারাত জেগে এবং না খেয়ে সন্তানদের সুস্থ করে তুলতেন, আজ সেই মায়ের কঠিন অসুখেও সন্তানদের যেন কোনো দায় নেই; এমনকি বছরের পর বছর সেই মায়ের খোঁজটা পর্যন্ত তারা নিতে পারে না। খোঁজ নিতে তারা দ্বিধাবোধ করে। যে বাবা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের সাধ-আহ্লাদ সব ত্যাগ করে সন্তানের আবদার পূরণ করতেন, সেই বাবাকেই এখন তার সন্তান নিজের বাবা-দাদার ভিটামাটিতে ঠাঁই দিতে চায় না। নিজের ঘরেই নিজের সন্তান তাকে পর করে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যায়। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ চায় সঙ্গী। এ বয়সে একাকিত্ব তাদের কুরে কুরে শেষ করে প্রতিনিয়ত। কিন্তু নিজের সন্তানরা যখন বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে বছরের পর বছরে কোনো খোঁজ-খবর নেয় না, তখন তারা অশ্রুর বন্যায় নিজেদের ভাসিয়ে নিয়তির কাছেই আত্মনিবেদন করে।

বৃদ্ধাশ্রমে মা-বাবাকে রাখার একটা বড় অংশ হচ্ছে আমাদের শিক্ষিত সমাজ। এ শিক্ষা কিন্তু আমাদের কাম্য ছিল না? আমাদের সমাজে সুশিক্ষার বড় অভাব। শিক্ষা অর্জন করলেও ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠেনি, যার দরুণ নিজের মা-বাবার পরিচর্যার ব্যাপারে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছেÑ‘পূর্বপুরুষকে নি¤œপুরুষ অনুসরণ করে।’ অর্থাৎ বাবার খাসলত ছেলেও কিছু কিছু পায়। এ থেকে বলতে হয়, ‘কে জানে আজকে যারা তাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে, তাদের সন্তানরাও সেভাবে তাদের ফেলে আসবে কি না।’ ওই যে পূর্বপুরুষ থেকে শেখা। এভাবে সবাইকে একটা সময়ে বৃদ্ধ হতে হবে। তাই বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে না রেখে তাদের জীবনের শেষ সময়টা পরিবারের সঙ্গে রেখে আনন্দময় করে তোলা উচিত, কারণ বাবা-মা সারাজীবন বেঁচে থাকে না, একবার হারিয়ে গেলে কোনোদিনও আর ফিরে পাওয়া যাবে না এ অমূল্য রত্ন। বৃদ্ধাশ্রম নয়, বরং নিজের বাড়িতেই বসবাসের জন্য স্থান হোক সব বাবা-মায়ের।

সাদিয়া ইসলাম দোলা

শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০