নিজস্ব প্রতিবেদক্র; কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে পণ্যবাজারে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার মৌলভীবাজারের মতো প্রধান প্রধান পণ্যবাজারসহ দেশের ছোট-বড় বিভিন্ন বাজার ও এলাকা থেকে পণ্য আনা-নেওয়া কমে গেছে। এতে প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যে। ইতোমধ্যে বাজারে সবজিসহ বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে চোখে পড়লো এমনই চিত্র। বিশেষ করে সরবরাহ কমায় হঠাৎ বেশি দাম গুনতে হচ্ছে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলুসহ কয়েকটি পণ্যে। সঙ্গে মাছের দরও বেশ চড়া। এতে গতকাল সপ্তাহের ছুটির দিনে বাজারে আসা নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষ দারুণ বিপাকে পড়েছে। অনেকে বাড়তি দামের কারণে কাক্সিক্ষত পণ্য না কিনতে পেরে ফিরেছেন খালি হাতে।
রামপুরা বাজারে আসা এনামুল হক বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহ থেকেই এমনটা অব্যাহত। দর বৃদ্ধিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও মাছ কিনতে পারলাম না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা। বিশেষ করে কাঁচাপণ্যের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে গেছে। অপরদিকে
পরিবহনস্বল্পতা ও রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে অধিক ব্যয়ে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জের বাজার থেকে পণ্য কিনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় কয়েক দিনে মজুত থাকা নিত্যপণ্যে চলছে বাজার। মজুত শেষে এখন পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
গতকাল আলাপকালে কারওয়ান বাজার ক্ষদ্র আড়তদার সমিতির সভাপতি এটিএম ফারুক বলেন, সর্বত্রই রাস্তায় খানাখন্দ। বৃষ্টি হচ্ছে। বন্যায়ও অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ। ফলে ট্রাকভাড়া বেশি। এতে সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিনি জানান, প্রতিদিন কারওয়ান বাজারে আড়াইশ থেকে তিনশ ট্রাক সবজি আসে স্বাভাবিক সময়ে। এখন তা অর্ধেকে নেমে গেছে। গত মঙ্গলবার বৃষ্টি ও পানির কারণে বেশিরভাগ ট্রাক বাজারে ঢুকতে পারেনি। বুধবারের জলাবদ্ধতায় ব্যবসা হয়নি। অবশ্য গতকাল কিছু পণ্য এসেছে।
বাজারে সব থেকে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। এছাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা টমেটো ৬০, ঢেঁড়স ৪০-৫০, করলা প্রতি কেজি ৪০-৬০, পটোল ৪০-৬০, কচুরমুখী ৫০-৬০, ধুন্দল ৪৫-৫০, ঝিঙ্গে ৪০-৫০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ৫০-৬০, কাঁকরোল ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি সবজি বিক্রেতা এনামুল জানান, কয়েক মাস ধরেই পটোল, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সব সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
বাজারে আসা নতুন সবজি শিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আর ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা প্রতিটি।
মুদিবাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বিভিন্ন পণ্য আগের দরেই রয়েছে। তবে বেড়েছে বোতলজাত তেলের দাম। রূপচাঁদা পাঁচ লিটারের বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ৫৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতলে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য এখন ৫৩০ টাকা, যা আগে ছিল ৫২০ টাকা। এছাড়া এক লিটারের বোতলের দাম বাড়িয়ে তীর ১০৭ ও রূপচাঁদা ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগের দরের থেকে প্রতি লিটারে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশি।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া মাছের দাম কমেনি। উল্টো আরও বেড়েছে। বিভিন্ন মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ২৫০-৩৫০, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০, কাতল ৩৫০-৪০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০, সিলভারকার্প ২০০-২৫০, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০-২৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০-৮০০, প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০, প্রতিটি ইলিশ ৮০০-১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজি হিসেবে প্রতি কেজি মাঝারি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকা।
Add Comment