পারভীন লুনা, বগুড়া: বগুড়ায় গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবার আবাদ বেড়েছে। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষক। বর্তমানে পাট জাগ দেয়া এবং আঁশ ছাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে জেলার পাটচাষিদের। কিন্তু অতিরিক্ত খরার কারণে পাট জাগ দিতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তবে গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা সস্তি ফিরে এসেছে পাটচাষিদের মনে। তারা পাট জাগ দিতে শুরু করেছেন। কৃষকরা পাট জাগ দেয়া ও ধোয়ার জন্য পানিতে নেমে ব্যস্ত সময় পার করছেন আর কৃষাণিরা পাট এবং পাটখড়ি রোদে শুকাচ্ছেন।
পাটচাষিরা জানান, এবার পাট রোপণ থেকে জাগ দেয়া এবং ধোওয়া পর্যন্ত কৃষকের বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। মৌসুম অনুযায়ী বীজ রোপণ করলে বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ মণ। পাট বোনার ১০০ দিন বা ৩ মাস ১০ দিনের মাথায় তা কাটার উপযোগী হয়ে ওঠে। পাট কেটে ডোবাতে আঁটি বেঁধে তা ১৫ থেকে ১৬ দিন পচনের জন্য রাখতে হয়। আঁটিগুলো পানিতে ডুবিয়ে তার ওপর কচুরিপানা দিতে হয়, যাতে সূর্যের আলো না পড়ে। ডোবার কিনারে বসে কৃষকেরা পচনধরা পাটের আঁটিগুলো থেকে আঁশগুলো ছড়িয়ে নিয়ে তা আবার পেঁচিয়ে রাখছেন। পাটের আঁশ শুকানোর পাশাপাশি তার পাটখড়িগুলোও শুকাচ্ছেন তারা। পাটের সঙ্গে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা পাটখড়ির, এক মণ পাটখড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
বগুড়া জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানিয়েছেন, এবার জেলায় ১২ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৯৯৮ হেক্টর। উৎপাদন ১৫০৭৬৬ বেল। বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ১০৬৭ হেক্টর। বর্তমানে আবাদ ১১ হাজার ১৯০ হেক্টর।
জেলার ১২টি উপজেলাতেই এ সময় বিভিন্ন ডোবা-নালা আর খাল-বিলে আঁটি বেঁধে বর্ষার পানিতে পাট জাগ দেয়া নিয়ে ব্যস্ত পাটচাষিরা। নির্দিষ্ট সময়ে যারা পাটের বীজ বপন করেছিলেন, তারা অবশ্য পাট জাগ থেকে তুলে আঁশ ছাড়াতে শুরু করেছেন।
জানা যায়, গত বছর বগুড়া জেলার পাটচাষিরা মণপ্রতি পাটের দাম পেয়েছে ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে দাম ২৮০০ থেকে ৩৩০০ টাকা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। দাম বেশ ভালো। দাম এমন থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করা যায়। তবে দাম ওঠানামা করে বলে জানিয়েছেন এলাকার পাট ব্যাপারীরা। কৃষকরা আশা করছেন এ বছর পাটের দাম আরও ভালো পাবেন। বগুড়া এলাকায় ৪ জাতের পাট চাষ হয়ে থাকে। দেশি, তোষা, মেস্তা, কেনাফ।
ধুনট উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের লালমিয়া বলেন, আমরা পাট চাষ করি, খুব পরিশ্রম করে এ ফসল ঘরে তুলি। পরিশ্রম অনুযায়ী অর্থ আসে না। আমাদের কাছ থেকে ফড়িয়া/ব্যাপারীরা কম দাম দিয়ে পাট কিনে নিয়ে গিয়ে হাটে বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করে। যদি সরকার নির্দিষ্ট দাম ধরে দিতো আমরা লাভবান হতাম।
ধুনট উপজেলার ভাণ্ডার বাড়ি গ্রামের পাটচাষি আকবর হোসেন বলেন, পাটের মৌসুমের শুরুতেই পাট চাষ করেছি। ১৬ দিন আগে তা আঁটি বেঁধে এ ডোবায় রেখেছিলাম। এখন পাট ধোওয়া এবং আঁশ ছাড়াতে শুরু করেছি। গতবার আমি বিঘাপ্রতি ১৪ মণ পাট পেয়েছি, আশা করছি এবারও তেমনি পাবো। গত বার আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। দাম ভালো থাকায় এ বছর ৬ বিঘাতে পাট চাষ করেছি।
ধুনটের নিমগাছি গ্রামের কালু মিয়া বলেন, পাট চাষে ভালো লাভ আছে, তবে বর্তমান পাট জাগ দেয়ার জায়গার অভাব। আগের মতো আর পাট জাগ দেয়ার মতো ডোবানালা নেই। অতিরিক্ত খরার কারণেও কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। এলাকায় দুই দিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, ছোট-খাট ডোবা নালাগুলো পানিতে ভরতে শুরু করেছে। এখন এসব স্থানে পাট জাগ দিতে পারব আমরা।
ধুনটের বেলতলী গ্রামের পাটচাষি মামুন বলেন, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এলাকার কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মাঠে প্রায় সব পাট কাটা শেষ হয়েছে, পাট জাগ আর আঁশ ছাড়াতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে। আশা করছি, আমরা ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারব।