হামিদুর রহমান: রাজধানীর বাজারগুলোতে কয়েক দিনের ব্যবধানে হুহু করে বাড়ছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। ঈদের আগের তুলনায় পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি আলুতে দাম বেড়েছে ৯ থেকে ১০ টাকা। আর প্রতিকেজি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ টাকা। বৃষ্টি ও আমদানি না থাকার অজুহাতে দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা জানায়, ঈদের সপ্তাহ খানেক আগেও প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে। মূলত এ বছর আলুর ফলন কম হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে আলু পচন ধরায় দাম বেড়েছে।
আর রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। আবার কিছু কিছু বাজারে ৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে আলু।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলুর দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে এভাবে দাম বাড়ছে। অভিযান পরিচালনা করলে এসব তথ্য বের হয়ে আসবে। বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও, কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে বড় ব্যবসায়ীরা।
রামপুরা বাজারে আলু কিনতে এসেছেন সবজি বিক্রেতা আবদুল ওয়াহাব। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, সিন্ডিকেট না থাকলেও দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আলুতে ৯-১০ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা মূলত দাম বাড়াতেই বৃষ্টি ও ফলন কম ও সরবরাহের ঘাটতির অজুহাত দেখাচ্ছে। প্রতি বছর ঈদের আগে বাজারে কিছু সিন্ডিকেট প্রবেশ করে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। সরকারের উচিত অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা।
বাজার করতে আসা ইদ্রিস উদ্দিন বলেন, এখন আলুর দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কারণ এখন আর কৃষকদের কাছে আলু নেই। যা ছিল সব বিক্রি করে দিয়েছে। সব আলু ব্যবসায়ীদের হাতে। তাই এখন দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ফতুর করছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ঈদের এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয় ১২০ টাকায় এবং এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে ১২ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে পাইকারি দামে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। যা রোজায় বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে। আর পাড়া-মহল্লায় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় ভ্যানে করে পেঁয়াজ ও আলু বিক্রি করেন বরিশালের মান্নান মিয়া। তিনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজের কেজি ৫৮ টাকা ও আলুর কেজি ৩৫ টাকা। দুদিন আগেও আলু বিক্রি করেছি ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। আজকে বিক্রি করছি ৩৫ টাকায়। শুনতেছি, আরও নাকি দাম বাড়বে।
এদিকে মগবাজারে মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের আবুল কালাম শেয়ার বিজকে
বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় প্রতিকেজি ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে দাম আরও বাড়তে পারে।
কেন দাম বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজে দাম বেড়েছে। আড়তদাররা বেশি দামে বিক্রি করছে। আমাদের কেনা বেশি দামে তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে কথা হলেও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বৃষ্টির কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি না থাকায়ও বাজারে পেঁয়াজ মজুতের প্রভাব পড়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ইন্ডিয়া থেকে পেঁয়াজ মজুত না হলে পেঁয়াজের দাম আরও কিছুটা বাড়বে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারী দোকান জামালপুর বাণিজ্যালয়ের রঞ্জু আহম্মেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজার থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ফলনও কম হয়েছে। আবার আমদানিও বন্ধ। ফলে নানা কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে সামনে ইন্ডিয়া থেকে পেঁয়াজ আমদানি হবে তখন বাজার স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে।’
পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে কেন জানতে চাইলে এ বাজারের আরেক ব্যবসায়ী রুস্তম উল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদনের পর থেকে এই পর্যন্ত অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে দেবে। তারপর থেকে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ টন। গত এক বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আট লাখ টন।
অপরদিকে দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন। গত বছর (২০২১-২২ মৌসুম) উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ টন আলু। পূরণ হয়েছে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রাও। এ বছরও আলুর আশাতীত ফলন হয়েছে। তারপরও আলুর দাম নিয়ে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃষ্টির অজুহাতে ঈদের পর থেকেই বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম
