বিরতিহীন বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় নি¤œাঞ্চল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত। কক্সবাজার জেলার বদরখালি, চকোরিয়া, কক্সবাজার সদর রামুথানাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার নি¤œাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, ফটিকছড়িসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাগুলোর প্রায় ইউনিয়ন পানিতে ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরিতে বিগত ২৪ ঘণ্টার থেমে থেমে বৃষ্টির পানি ও জোয়ারের পানিতে সেলিমপুর, উত্তরকাট্টলী, বড়পোল, মিস্ত্রিপাড়া, নয়াবাজার, বাকলিয়া, সৈয়দশাহ রোড ও চকবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নি¤œাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। সেলিমপুর ইউনিয়নের কালিরহাট, সিটিগেইট এলাকায় স্থানীয় নালা ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ও বাসা-বাড়িতে কোমরপানি হয়ে যায়। ফলে ওই এলাকার শত শত বাড়ির ভিটায় পানি উঠে জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ লেগে আছে।
স্থানীয় কালিরহাট রাস্তাটি সীতাকুণ্ড উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের মাঝামাঝিতে হওয়ার কারণে রাস্তা, নালা ও খালের সংস্কার করছে না কোনো পক্ষই। দুই থানার বিরুদ্ধে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ বছরের পর বছর বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কষ্ট পেয়ে আসছে। স্থানীয় জনগণ ইউপি চেয়ারম্যান সিটি করপোরেশনের কামিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এসব এলাকায় বাড়িঘরে পানি উঠেছে। গবাদিপশু ও জমির চারা সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষক বৃষ্টির পানির জন্য কাঁদছিল। আল্লাহ বৃষ্টি দিয়েছেন, প্রচুর বৃষ্টির পানি আর জোয়ারের পানিতে বীজ আর জমি একাকার হয়ে গেছে। কৃষকের মাথায় হাত। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অলিগলির দোকানে পানি। বাড়িঘর ডুবে গেছে, চুলা জ্বলছে না। এদিকে শহরের চেয়ে গ্রামের হাটবাজারের সব নিত্যপণ্যের মূল্য তিন-চারগুণ বেড়ে গেছে। জমির তরিতরকারি ও শাকসবজি সবই পানির নিচে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চাল-ডালসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। কাজ করতে না পারলেই ইনকাম নেই।
পরিবার-পরিজনের জন্য আহার জোটে না। খুব কষ্টের মধ্যে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ দিন যাপন করছে।
অনেক পুকুর-জলাশয় ডুবে যাওয়ায় মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের দিন যাচ্ছে খুবই কঠিনভাবে। চাল, ডাল, মরিচ, পেঁয়াজ ও রসুন সব ধরনের মুদিপণ্যের মূল্য চড়া। খেয়ে না খেয়ে হাজার হাজার পরিবার এখন রাত কাটাচ্ছে। পরিবারের শিশুদের অন্ন জোগাতে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষরা চরমভাবে অভাব-অনটন পার করছে। এই সুযোগে স্থানীয় সুধী মহাজন স্বর্ণালংকার বন্ধক নিয়ে চড়া মূল্যে সুদে লাগাচ্ছে। এই অঞ্চলের ৯৫ ভাগ মানুষ এখন চরমভাবে খাদ্যাভাব ও অর্থ সংকটে পড়ে গেছে। ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। পাহাড়ি পানি ও জোয়ারের পানিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেশ কিছু এলাকার মানুষ এখন পানিবন্দি। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অঞ্চলের মানুষ এখন চরমভাবে প্রাকৃতিক ও পাহাড়ি ঢলের পানির দরুন উদ্ভূত বন্যার শিকার। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সংস্থাকে ভুক্তভোগী জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে অসহায় পানিবন্দি মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। ত্রাণ কার্যক্রম অবশ্যই স্বচ্ছতার মাধ্যমে করতে হবে।
রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না রেখে প্রকৃত অভাবী ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের ঠিকানায় পৌঁছাতে হবে।
স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় অতি দ্রুততার সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক। সরকারের পাশাপাশি নিজ এলাকায় স্থানীয় বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। মানবসেবায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার। মহান সৃষ্টিকর্তা ধনী-গরিবের মধ্যে একটি তফাত রাখেন। ধনীরা প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক এবং গরিব মানুষ দিনে এনে দিনে খায়। উপার্জন করে খুব কষ্ট আর পরিশ্রম করে। তারা পরিশ্রমে বিশ্বাসী।
কিন্তু যখন পরিশ্রম বন্ধ হয়ে যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বন্যা-খরায়, তখন তাদের দিন কাটে অনাহার ও অর্ধাহারে। কিন্তু ধনীদের অর্থের পাহাড় জমছে, নানাভাবে তাদের প্রচুর অর্থ আছে। সেই জমাকৃত অর্থ থেকে এগিয়ে আসুন। সবাইকেই নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত করে চলে যেতে হবে। তাই অর্থ সঞ্চয় না করে অসহায় মানুষের পাশে থাকি। সেখানে আপনার-আমার জন্য পরকালের আশ্রয় হবে, মুক্তির পথের পাথেয় হবে।
এসব এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করতে হবে। শহর ও গ্রামের বৃষ্টির পানি বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে টেকসই মাত্রায় বুঝে নিতে হবে। উন্নয়নের অর্থ লুটপাট বন্ধ করতে হবে। কাজের মান তদারকি বিল পাশ প্রভৃতির মধ্যে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকা চাই। আসুন ধনী-গরিবের পর্দা তুলে মানবসেবায় অসহায় বন্যার্ত জনগণের পাশে দাঁড়াই।