Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:01 pm

বেইজিং-টোকিও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের আশা চীনের প্রধানমন্ত্রীর

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে চীন ও জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতিপথ ঠিক রাখতে পারবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে দুদেশই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চীনা সংবাদমাধ্যম শিনহুয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে আসিয়ান সম্মেলনে মূল অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক করেন লি কিয়াং। বৈঠকে লি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে দুদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংহত করবে। লি আরও বলেছেন, শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা, মসৃণ প্রবাহ ও বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষায় দুই দেশের যৌথভাবে কাজ করা উচিত। জিনহুয়া নিউজ জানিয়েছে, লাওসের ভিয়েনতিয়েনে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর লি এ মন্তব্য করেন।

এদিকে ইশিবা বলেছেন, চীনের সঙ্গে শিল্প ও সরবরাহশৃঙ্খল বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া বা তেমন কোনো ইচ্ছা জাপানের নেই। তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
গত মাসের শেষের দিকে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইশিবা আরও বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই জাপান অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চায়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করার আগ্রহও ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়ার সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। ফোনালাপে তাকেশি ইওয়ায়া বলেছেন, জাপানের নতুন মন্ত্রিসভা চীনের সঙ্গে সার্বিকভাবে পারস্পরিক উপকারী কৌশলগত সম্পর্ক উন্নত করতে ইচ্ছুক এবং আরও গঠনমূলক ও স্থিতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। জাপান ও চীনের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার সুপ্ত শক্তি রয়েছে, চীনের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আদান-প্রদান করে বিতর্কিত সমস্যার সমাধান করতে চায় টোকিও, যাতে দুদেশের জনগণের আরও বেশি কল্যাণ বয়ে আনা যায়। এশিয়া ও বিশ্বের শান্তি আর স্থিতিশীলতায় জাপান ও চীনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। চলমান অস্থির আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে সংলাপ ও সমন্বয় পদ্ধতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে জাপান, যাতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আরও বেশি অবদান রাখা যায়।

ওয়াং ই বলেছেন, জাপানের নতুন মন্ত্রিসভার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে ইতিবাচক ইঙ্গিতের প্রশংসা করে বেইজিং। চীন ও জাপান প্রতিবেশী দেশ, পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা এবং অভিন্ন উন্নয়ন দুদেশের জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। জাপানের নতুন মন্ত্রিসভা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন তিনি, যাতে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন হস্তক্ষেপ উপেক্ষা করে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা যায়; চীন ও জাপানের সার্বিক কৌশলগত উপকারী সম্পর্কের উন্নয়ন করা যায়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন চীনের তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি মেনে চলা এবং ‘এক চীন নীতি’র প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রত্যাশা করে বেইজিং। চীনের প্রতি সঠিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ চেতনা পোষণ করা উচিত। চীন ও জাপান পারস্পরিক সহযোগিতামূলক অংশীদার, কখনও পরস্পরের হুমকি নয়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সঠিক পথে স্বাস্থ্যকর ও স্থিতিশীল উন্নয়নে চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে চলমান জটিল ও সংঘাতময় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। কোনো বৈদেশিক শক্তির উস্কানি বা হস্তক্ষেপ এড়ানো উচিত।

জাপানের জলসীমার কাছে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতাসহ বেশকিছু ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা উসকে দিয়েছিল। জাপানসংলগ্ন জলসীমায় প্রথমবারের মতো চীনা রণতরী শনাক্তের দাবি করেছে জাপানের কর্তৃপক্ষ। দেশটির দক্ষিণ ইয়োনাগুনি ও ইরিওমোট দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় রণতরীটি শনাক্ত করেছে দেশটি। জাপানের জলসীমায় চীনা রণতরীর অস্থায়ী এই অনুপ্রবেশের ঘটনা প্রতিবেশী দেশগুলোর উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব সমস্যা নিরসনে জাপান ও চীনের শীর্ষ কূটনীতিবিদদের মধ্যে ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার কিছুদিন পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠক হয়।