একটি দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে কর্মক্ষম যুবসমাজ। এ শ্রেণিকে যত বেশি দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে, দেশও তত এগিয়ে যাবে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে জনমিতির লভ্যাংশ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) কাজে লাগাতে উন্নত দেশগুলো পরিকল্পনা সাজিয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যুবসমাজের কর্মক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষত উচ্চশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে এ হার আরও বেশি। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছেÑযত বেশি উচ্চশিক্ষত, তত বেকারত্বের ঝুঁকি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে দশ লাখই উচ্চশিক্ষিত। এ পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শিক্ষিত বেকার যে বাড়ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এমনই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) যুব সম্মেলনে। কাজেই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড যথাযথভাবে কাজে লাগানো ও উচ্চশিক্ষিত বেকারের হার কমাতে কর্মমুখী শিক্ষা জোরদার করতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী যুবসমাজের এক-তৃতীয়াংশ বেকার। এ বেকারত্ব কমিয়ে আনতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। এ-সংক্রান্ত একটি খবর ‘শিক্ষিত বেশি হলে বেকার হওয়ার ঝুঁকিও বেশি’ শিরোনামে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশ হয়েছে। খবরটি দেশে ক্রমে বাড়তে থাকা শিক্ষিত বেকার সমস্যা নিয়ে একটি সতর্কবার্তা। এটি অনুধাবন করে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখনই সতর্ক হতে হবে।
শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী বলে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। এর মধ্যে অদক্ষতা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা, কর্মমুখী শিক্ষার অভাবসহ নানা বিষয়কে দায়ী করা হয়। অনেকে শিক্ষিত হয়ে সমাজে ‘অসম্মানজনক’ হিসেবে পরিচিত কাজ করতে আগ্রহী নন। শিক্ষিতদের বেকারত্ব কমিয়ে আনতে উদ্যোক্তা হওয়ার কথাও বলা হয়। বাস্তবতা হলো, শিক্ষিত কেউ উদ্যোক্তা হতে গিয়ে পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করতে না পারা, সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতাসহ নানা ব্যাপার রয়েছে। এগুলো অনালোচিত নয়। অর্থাৎ দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণগুলো আমাদের জানা। দুঃখজনক হলো, এর সমাধানে এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়নি। কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।
আমাদের দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। প্রতি বছরই বিপুল অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কিংবা প্রশাসনিক কাজে ব্যয় হচ্ছে। বিভিন্ন বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও এগুলো কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারছে না। এতে বিপুল অর্থ অপচয়েরও অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন চালাতেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেখানে অনেক কর্মী ঠিকমতো কাজ না করেই অর্থ তুলে নিচ্ছেন। আবার তাদের সুযোগ-সুবিধাও ক্রমে বাড়ছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশই অর্থ ব্যয়ের আগে কিংবা বিনিয়োগের প্রস্তাব পেলে এর উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আগে। আমাদের দেশে এমন পরিকল্পনা দেখা যায় না বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জনগণের অর্থ ব্যয়ের আগে সব কিছু সুপরিকল্পিত হওয়া উচিত বলেই আমরা মনে করি।
সিপিডির অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, শিক্ষিতদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি বড় চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতা হলো, এটি মোকাবিলা করতে হবে। দেশে বিরাট যুবসমাজ রয়েছে, এটি আমাদের বড় পাওয়া। এ সুবিধা আরও বেশ কিছুদিন বহাল থাকবে। এ অবস্থায় তাদের সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর পথ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষার পাশাপাশি যুবসমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যুবসমাজকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার যোগ্যতাও যেন তারা অর্জন করে।

Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:13 am
বেকারত্ব দূরীকরণে জোর দিন কর্মমুখী শিক্ষায়
সম্পাদকীয় ♦ প্রকাশ: