বেঙ্গল বিস্কুটের বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্ত কমিটি

আতাউর রহমান: পুঁজিবাজারে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেঙ্গল বিস্কুটের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গঠিত কমিটিকে এ আদেশ জারি হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑবিএসইসির যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন সদস্য (সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা)।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেঙ্গল বিস্কুটের সার্বিক বিষয়ের ওপর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন। এরই ধরাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্সের ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের ১৭ক ধারা অনুযায়ী, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হলো। এ আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিএসইসতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

তথ্যমতে, সম্প্রতি বেঙ্গল বিস্কুটের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির হাতে জমা পড়েছে। ওই অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে কোম্পানিটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করে বেঙ্গল বিস্কুটের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠায় কমিশন। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কমিশনে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, তার বেশিরভাগই আর্থিক অনিয়মের। আর বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের কাগজপত্র, ওই সময় থেকে প্রতি মাসের বিক্রয় প্রতিবেদন এবং ব্যাংকের স্টেটমেন্ট কমিশনে জমা দিতে হবে। ওই সময় থেকে মাসিক ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সের (ভ্যাট) কাগজপত্রও জমা দিতে হবে। এছাড়া কোথায় মালামাল বিক্রি করা হয়েছে, সেই ঠিকানাসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানিতে চাকরিরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য এবং তাদের গত তিন মাসের বেতন-ভাতার শিট কমিশনের জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যৎ উন্নতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন, পরিচালকদের পর্ষদ সভা-সংক্রান্ত কাগজপত্র, তাদের পর্ষদ সভার পরিচালকদের ভাতা-সংক্রান্ত হিসাব ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নিশ্চিত করে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, বেঙ্গল বিস্কুটের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটিতে ডিএসইর শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট থেকে একজন প্রতিনিধি দিতে বলা হয়েছে। তবে এখনও কোনো প্রতিনিধি নির্ধারণ করা হয়নি। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই প্রতিনিধি নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘসময় লভ্যাংশ না দেয়া এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করায় কোম্পানিটিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। সেই ওটিসি মার্কেটের কোম্পানির শেয়ারের দাম এসএমই প্ল্যাটফর্মে এখন ১০০ টাকার বেশি। কিন্তু কোম্পানির ২০২১ হিসাববছরের আর্থিক অবস্থায় দেখা গেছে, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৭৯ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ৯ টাকা ৮৮ পয়সা। একটি ১০ টাকা সম্পদ মূল্যের শেয়ারের দাম ১০০ টাকার বেশি কীভাবে হয়Ñএমন প্রশ্ন তুলে শেয়ারটি নিয়ে বড় কোনো চক্র কারসাজি করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে কোম্পানির অনিয়ম ও অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি এর শেয়ারদর ও লেনদেন নিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ওটিসি মার্কেট থেকে বেঙ্গল বিস্কুটকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

উল্লেখ্য, বেঙ্গল বিস্কুট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ারসংখ্যা ৭৯ লাখ ৩৮ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার আছে। কোম্পানির শেয়ার ১৩ অক্টোবর সর্বশেষ ১০৭ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০