বেজার বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণ বিষয়ক সেমিনার: আদর্শ বিনিয়োগ কেন্দ্র হবে চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। আছে শিল্প স্থাপনের জন্য জমি। জ্বালানি চাহিদা পূরণে মহেশখালীতে হচ্ছে বড় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল। আছে সস্তা শ্রমের বিপুল বাজার। সব মিলে আগামী দশকের বিনিয়োগের জন্য আদর্শ কেন্দ্র হবে চট্টগ্রাম। এর মাঝে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে জাপান, চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ।

গতকাল রোববার সকালে নগরীর র‌্যাডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউতে অনুষ্ঠিত ‘ইকোনমিক জোনগুলোতে বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণ বিষয়ক সেমিনার’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। এ সময়ে দেশের অর্থনীতি হবে দ্বিগুণ। নতুন নতুন শিল্পাঞ্চলের মাধ্যমে যুব সমাজের কর্মসংস্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এসব শিল্পাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানির জন্য আমাদের বাজার ধরতে হবে। বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের এত বড় বাজারকেও কাজে লাগাতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না। এর জন্য এখন থেকে আমাদের বিভিন্ন শিল্প এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিন ও চট্টগ্রাম চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

ইকোনমিক জোনগুলোতে দেশি-বেদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ইনসেনটিভ ও টেক্স হলিডে দিতে হবে মন্তব্য করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ এখনো আমেরিকা বা জার্মানির মতো উন্নত রাষ্ট্র হয়নি যে দেশি-বেদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ইনসেনটিভ ও টেক্স হলিডে দিতে হবে না। উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, যেন পরিবেশ নষ্ট না হয়, যেন ফসলি জমি নষ্ট না হয়। তিনি বলেন, জমি বাড়ছে না। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেই আমাদের শিল্পোন্নয়ন করতে হবে। আবার পরিবেশ সুন্দরভাবে রক্ষা করাও আমাদের দরকার। সে জন্য উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পবন চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণ হতে যাচ্ছে টানেল, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভ, মহেশখালী-মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ চট্টগ্রামকে ঘিরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ চট্টগ্রাম সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে বন্দর আছে, বিমানবন্দর আছে। সবকিছু আছে। সে জন্য সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রামের মিরসরাইতে হবে। এছাড়া আনোয়ারায় ৮০০ একর এলাকা নিয়ে হচ্ছে অপর একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল। আনোয়ারার এ অঞ্চলে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। এতে ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

সরকারি অফিসগুলোয় সেবা পেতে অনেক সময় সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী বলেন, ‘হয়রানি থামাতে আইন হচ্ছে। এটা প্রক্রিয়াধীন। এটা হয়ে গেলে আমি পবন চৌধুরীও যদি সেবা দিতে বিলম্ব করি, তাহলে সেই আইনের আওতায় আনা যাবে।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘অনেক সরকারি অফিস আছে যেখানে সেবাগ্রহীতারা হয়রানির শিকার হন। সাতদিনের কাজ ১৫ দিন, ১৫ দিনের কাজ ছয় মাসে সম্পন্ন হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে এক বছর লাগে। এটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের স্টাডি। অধিকাংশ সার্ভিস দিতে বিলম্ব হচ্ছে। সেবা পেতে এসব বিড়ম্বনার কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের তুলনায় এখানে বিনিয়োগ কম হচ্ছে।’

বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সারা দেশে আগামী ১৫ বছরের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের শিল্প স্থাপনের অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি, যৌথ উদ্যোগ, জি টু জি, পিপিপিসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ কাজে স্থানীয় জনসাধারণসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশন করা হয়। এসব ভিডিওচিত্র পরিবেশনে ছিল বেসরকারি উদ্যোগে পিপিপির আওতায় নির্মাণাধীন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরের ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট সংলগ্ন ‘মেঘনা ইকোনমিক জোন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার এবং একই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে নির্মাণাধীন ‘মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, ‘মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’, কক্সবাজার এলাকার ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ এবং মৌলভীবাজারে ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের কাজ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এ অনুষ্ঠানের বিজনেস সেশনের চারটি বিষয়ে আলোকপাত করেন বিশেষজ্ঞরা। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নিয়ে উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০