Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:28 pm

বেজার সেমিনারে বক্তারা: কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কৃষি খাতের পাশাপাশি শিল্প খাতের দিকে অগ্রসর হওয়া খুবই জরুরি। সেজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন একটি ভালো পথ। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা কোনোভাবেই ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এদিকে ইতোমধ্যেই মংলাসহ অন্তত চারটি অর্থনৈতিক জোন বিনিয়োগ শুরুর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আয়োজিত বিনিয়োগ উন্নয়ন বিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

রাজধানীর রেডিসন হোটেলে আয়োজিত এ সেমিনারে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বেজার নির্বাহী পরিচালক পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী সেশনের পর বিশেষ সেশনের পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের পরিচালনায় অংশ নেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. চোশী কোরায়শী, বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা সীমা মেঙ্গি, আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দীন মোনেম প্রমুখ অংশ নেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামাল আবদুল নাসের বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চাশাসম্পন্ন ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে। এজন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কাঠামো পরস্পর সম্পৃক্ত। আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় কাজ করছি।

এ সময় বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জোন রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আলাদা আলাদা অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে মীরসরাই ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে। এরই মধ্যে মোংলাসহ প্রায় চারটি অর্থনৈতিক জোন প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেখানে এখনই বিনিয়োগ শুরু করা যায়।

বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দীন মোনেম। তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে। এখন তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ওয়ান স্পট সার্ভিসসহ বিভিন্ন সুবিধা দরকার। এজন্য বেজাকে অধিক ক্ষমতাসীন করা দরকার।

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এখনও কৃষি খাতের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমরা কৃষি থেকে শিল্পের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়েছি। তবুও টেকসই অবস্থার জন্য কৃষি ও শিল্পের সমন্বিত অবস্থা দরকার। এজন্য কিছুতেই কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে অর্থনৈতিক জোনগুলো স্থাপন করা ঠিক হবে না।

সেমিনারে বিশ্বব্যাংক ও জাপানের প্রতিনিধিরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম, ভারত, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় অনেক এগিয়ে আছে। ডুইং বিজনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে বাংলাদেশকে নিচের দিক থেকে খুঁজতে হচ্ছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, প্রত্যেক দেশের নিজস্বতা রয়েছে। এক দেশের বাস্তবতা অন্য দেশে আমদানি করা যাবে না। বিদেশিদের উপদেশ আমরা পাই। কিন্তু বাংলাদেশকে নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিল্পায়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ এবং অবকাঠামো। এগুলোর জন্য বেজা কাজ করছে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অবস্থার সুযোগ নিতে হলে এখন নানাভাবে কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। গ্লোবাল ও আঞ্চলিক করিডোরগুলোতে যুক্ত হতে হবে। বাণিজ্য, ট্রান্সপোর্ট, লজিস্টিক ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংযোগ বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক জোনের মাধ্যমে লজিস্টিক ও বিনিয়োগের সংযোগ সৃষ্টি করবে যা বাকি প্রয়োজনগুলো পূরণের দিকে ধাবিত করবে বাংলাদেশকে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এইড নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এখন বিনিয়োগনির্ভর। ২০২৭ সাল নাগাদ আমরা স্বল্পোন্নত অবস্থা থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপ নেব। এজন্য আমাদের হাতে আছে ১০ বছর। এ ১০ বছর আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের বাজার বিশেষ সুবিধা পাব। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক জোনের বিকল্প নেই।