বেড়িবাঁধে ফের ভাঙনে শঙ্কিত মাতারবাড়ীবাসী

কাইমুল ইসলাম ছোটন, কক্সবাজার: কক্সবাজার শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুবাদে সারাদেশে মাতারবাড়ী পরিচিত হলেও বছরের পর বছর শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছর বেড়িবাঁধের ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাতে হয় উপকূলের মানুষদের। পূর্ণিমার জোয়ারে পানি বাড়লে অনেকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় কেউ চোখের জল ফেলছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বারবার সংস্কার হলেও কোনো সুরাহা মিলছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ইতোমধ্যে চারটি বসতবাড়ি ভেঙে গেছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান।

স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে বিগত ১০ বছরে শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে বাধ্য হয়েছেন অন্যত্র চলে যেতে। অনেকে ঝুঁকি জেনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ছেন বেড়িবাঁধ ঘেঁষে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে এমন ভাঙন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বারবার প্রতিবাদ করেও কোনো সুরাহা মেলেনি বলে তাদের দাবি।

স্থানীয়রা আরও জানান, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে টেকসই না বাঁধ দেয়ার কারণে জোয়ারের ধাক্কা সরাসরি বেড়িবাঁধে আঘাত করে। এতে বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সহজে এটি ধসে পড়ে। মাতারবাড়ী রক্ষার্থে তারা টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান।

গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের ৯টি স্থানে পুনরায় বড় বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি দুই থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধির ফলে অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ উপছে বসতভিটায় পানি প্রবেশ করছে। সর্বশেষ চার কোটি টাকা বাজেটে ৮০০ মিটার এলাকা সংস্কারে স্থাপন করা জিওব্যাগসহ মাটি ধসে পড়ে গেছে। অনেকগুলো জিওব্যাগ সাগরে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশের পাশাপাশি  সেগুলো ভেঙে গেছে। দ্রুত সংস্কার না হলে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। পূর্ণিমার চলতি জোয়ার আরও দুদিন থাকবে বলে জানা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা জবর নুর বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে বালি দেয়ার কারণে ধসে পড়ে। বারবার টেন্ডার হলেও টাকা হরিলুট হয়। রাতে পানি বাড়লে কি হবে জানি না। চোখের ঘুম হারাম হয়ে যাবে সবার।

বেড়িবাঁধের তীরবর্তী বাসিন্দা আলী হোসাইন, লেদু ও পারভীন বলেন, বেড়িবাঁধ নিয়ে আমরা কষ্টে আছি। প্রতিবারই ভাঙনে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও বারবার তা ধসে পড়ে। পাথর ছাড়া বালি ও জিও ব্যাগ দিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা যাবে না। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে মাতারবাড়ী অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ৪টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়িতে পানি ডুকছে। তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার দাবি জানান তিনি।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য অস্থায়ী বাঁধের কাজ করছি। স্থায়ী কাজ না হলে এরকম জোয়ার ঠেকানো সম্ভব নয়। টাকা গচ্ছা যাওয়ার বিষয়ে বলেন, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভাঙা অংশে কাজ করছি। এ জন্য সুপারডাইকের প্রকল্প দিয়ে প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি। এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন শিমুল শেয়ার বিজকে বলেন, বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে জানা নেই। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিষয়। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে খোঁজ নেবেন বলে জানান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০