নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজের দামে স্বস্তি মিলছেই না। হঠাৎ কিছুটা দাম কমলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে আবারও দাম বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও এখন রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। পেঁয়াজের বাড়তি দামের সঙ্গে স্বস্তি দিচ্ছে না সবজিও। শিম, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগমে বাজার ভরপুর থাকলেও বেশিরভাগ সবজির দাম বেশ চড়া। এমনকি সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে দাম বাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। রেকর্ড ২৫০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি। তবে দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে। নতুন পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা মধ্যে চলে আসে। কিন্তু ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে হঠাৎ করেই দেশি নতুন পেঁয়াজ কেজি ১৮০ টাকায় ওঠে যায়। পরে কয়েক দফায় দাম কমে চলতি মাসের প্রথমদিকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকায় নামে। প্রায় দুই সপ্তাহ স্থির থাকে পেঁয়াজের দাম। তবে আজ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
একজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, দাম বেশি হওয়ায় চাষিদের একটি অংশ নির্ধারিত সময়ের আগেই মুড়ি পেঁয়াজ তোলা শুরু করে। এ কারণে বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ফলে দাম কমার বদলে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। দেদার মুড়ি পেঁয়াজ তোলা না হলে এখন পেঁয়াজের দাম অনেক কম থাকত। এদিকে পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ায় বিরক্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজারে কার্যকর নজরদারি না থাকায় সিন্ডিকেট চক্র এভাবে দাম বাড়াচ্ছে।
কয়েকজন ক্রেতা বলেন, এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। আবার ভারতও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাহলে পেঁয়াজের কেজি কেন ১৫০ টাকা হবে। এটা কিছুতেই স্বাভাবিক না। এখন পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার নিচে থাকা উচিত। মূলত বাজারে দায়িত্বশীলদের কোনো নজরদারি না থাকায় এভাবে দাম বাড়ছে। আরও বলেন, এখন আস্তে আস্তে পেঁয়াজের দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑদাম কমার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০০ টাকা। এখন সেই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা হয়েছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, সব ধরনের সবজির দামও চড়া। বাজারে গেলে কোনো কিছুর দাম স্বস্তি দিচ্ছে না।
বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে ৪০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শসার মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহে ৫০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। আগের সপ্তাহের মতো বাজার ও মানভেদে পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা। দেশি পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা ও গাজরের। ভালো মানের শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি। মুলা পাওয়া যাচ্ছে ২০-২৫ টাকার মধ্যে।
নতুন গোল আলু ২৫-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। মাঝারি আকারের প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকায়।
বাজারে ইলিশের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় দাম কমেছে সবধরনের মাছের। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ টাকায়। এছাড়া ছোট ইলিশ আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কাচকি ৩০০ টাকা কেজি, মলা ৩৫০, ছোট পুঁটি (তাজা) ৪০০ থেকে ৫০০, শিং ৩০০ থেকে ৬০০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০, চিংড়ি (গলদা) ৪৫০ থেকে ৬৫০, বাগদা ৪০০ থেকে ৯০০, দেশি চিংড়ি ৩০০ থেকে ৪৫০, রুই (আকারভেদে) ২২০ থেকে ৩৫০, মৃগেল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাশ ১২০ থেকে ১৮০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০, কই ১৮০ থেকে ২০০, কাতল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে ডিমের দাম না বাড়লেও কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৩০ টাকা, লেয়ার ২২০, সাদা লেয়ার ১৮০, সোনালি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭৮০, বকরির মাংস ৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল চাল ও মসলার বাজার। খোলা সয়াবিন (লাল) বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা লিটার, খোলা সাদা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা লিটার। অপরিবর্তিত আছে সরষের তেল।
এসব বাজারে বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি বস্তা চিনিগুড়া চাল পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ হাজার ২৫০ টাকা, মিনিকেট (নতুন) দুই হাজার ৪৫০, মিনিকেট (পুরোনো) দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫৫০, আটাশ এক হাজার ৮৫০, বিভিন্ন ধরনের নাজিরশাইল চাল দুই হাজার ২৫০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৬০০ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক/দেড় মাস আগে এলাচ বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে। জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে। এর আগে জয়ত্রী বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে। জায়ফল গত দেড় মাসে দুইগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এর আগে জায়ফল বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজি দরে।