বেড়েছে পেঁয়াজ-মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজের কেজিতে ২৫ ও মুরগির ২০ টাকাসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হুট করেই বেড়েছে। শীতকালীন সবজির ভালো সরবরাহ থাকলেও কমেনি দাম। বলা চলে ভরা মৌসুমেও সবজির দাম চড়া। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২০০-২৫০ টাকার নিচে নেই কোনো ভালো মাছ, ১৭০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি, ৬৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস, ১০০০ টাকা কেজি খাসির মাংস। শুধু তাই নয়, মোটা চালের কেজি ৫২ টাকা, সয়াবিন তেল ১৬৫-১৬৮ টাকা। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়ন্ত।

বাজারের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা অসহায় নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত মানুষ। কিছু দাম কমানোর আশায় এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে ঘুরে হয়রান তারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিক বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক লাফে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মুরগির দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৫০-৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী গৌতম বলেন, বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এ কারণে এখন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই।

কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা বদর আলী বলেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি কিনেছি ৩০ টাকা। আজ ৫০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। এক লাফে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, বাজারে এখন সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক। চাল, তেল, চিনি, ডাল কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।

তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছেন। কিন্তু আমাদের এ কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই।

বাজারে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

খিলগাঁওয়ে ৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা আল আমিন বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়া দেখে আমরাও অবাক। দুদিনে দুই দফায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে আমরা এক কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা বিক্রি করেছি। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কী কারণে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ল, এটার সঠিক কারণ আমারও জানা নেই। তবে পাইকারি বাজারে গিয়ে শোনা যাচ্ছে, বৃষ্টিতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে, এ কারণে দাম বেড়েছে।’

এদিকে, মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭০-১৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫০-২৮০ টাকা।

মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিকুর বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম। এ কারণে দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির

দাম বাড়ার কারণে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। সামনে মুরগির দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করছি।

সরেজমিনে নিউমার্কেটের মাছ ও সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, মাঝারি রুই মাছ ২৫০-২৭০ টাকা, ছোট কাতল মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ টাকা, বড় পাঙ্গাশ মাছ ২৮০-৩০০ টাকা, আকার ভেদে ইলিশ মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, সিলভার কার্প মাছ ২০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ টাকা, ফালি মাছ ৪৫০ টাকা, আইড় ৬০০ টাকা, বড় কৈ ৬০০ টাকা, বেলে ৪৫০ টাকা, শিং ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ছোট মাছের মধ্যে চিংড়ি ৩০০ টাকা, কাচকি ৪৫০ টাকা, মলা ৩০০ টাকা, টাটকিনি ২৫০ টাকা, পাবদা ৫০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকার ভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে বড় সুরমা মাছ ৩০০ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০-৮০০ টাকা, লাল কোরাল ৫০০-৬০০ টাকা ও বাটা মাছ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছ বাজার কিছুটা চড়া জানিয়ে শাহ আলম নামে মাছ বিক্রেতা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত মাছের সরবরাহ থাকার পরও খাবারের দাম ও জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। শুধু হোটেলগুলোতেই বড় মাছ বিক্রি হচ্ছে। খুব কম সংখ্যক সাধারণ মানুষই বড় মাছ কিনছে। অতিরিক্ত দাম নিয়ে আমাদেরও কিছু বলার নেই।

অপরদিকে বাজারে শাকসবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চড়া সবজির বাজার। টমেটো ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শিম ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, শসা ৩৫ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০, পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, রসুন ১১০-১২০ টাকা, গোল আলু ২০ টাকা, দেশি আদা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাউ ৯০-১০০ টাকা, ব্রুকলি , ফুলকপি, পাতা কপি ৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

মুদি পণ্যের মধ্যে মুগডাল ১২৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, এংকর ডাল ৪৫ টাকা, মসুর ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, খোলা চিনিগুড়া চাল ৯০-১০০ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭০ টাকা, চিনি ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

শামসুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা হিমশিম খাচ্ছি। সবকিছুর দাম এভাবে বাড়তে থাকলে চলার উপায় থাকবে না। কিছুটা কম দামে জিনিস কেনার আশায় নিউমার্কেটে এসেছিলাম। এখানেও দেখি একই অবস্থা। পাইকারি খুচরা সবখানেই প্রায় একই রকম দাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০