নিজস্ব প্রতিবেদক:বেতনবৈষম্য নিরসন দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করছেন দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নির্ধারণ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করছেন তারা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনে বসেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আলম বলেন, এখানে ৫০-৬০ হাজার শিক্ষক উপস্থিত। দাবি আদায় বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়া গেলে আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
অনশনকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগের বেতন স্কেলগুলোয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান তিন ধাপ। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে (মূল বেতন ১০ হাজার ২০০) বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১০তম গ্রেডে (মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা)। সহকারী শিক্ষকরা এ বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিতে ১১তম গ্রেডে (১২ হাজার ৫০০) বেতন চান। এ তথ্যটি হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন না।
সহকারী শিক্ষক ফ্রন্টের সভাপতি ইউএস খালেদা আক্তার বলেন, আমরা বৈষম্যের শিক্ষার। ইতিপূর্বে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তা পূরণ করা হয়নি। দাবি পূরণ করা ছাড়া আমরা শহীদ মিনার ছেড়ে যাব না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। প্রধানমন্ত্রী, আমরা মর্যাদা নিয়ে ক্লাসে ফিরে যেতে চাই। আপনার একটা আশ্বাসই পারে আমাদের সব সমস্যা সমাধান করতে।
ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম ফেরদৌসী বলেন, দেশের ৬৪টি জেলা থেকেই শিক্ষকরা এসেছেন। অনেকে পথে আছেন। কর্মসূচিতে আমরা এক থেকে দেড় লাখ শিক্ষকের সমাবেশ ঘটাব।
অনশন কর্মসূচিতে সহকারী শিক্ষক সমাজ, সহকারী শিক্ষক সমিতি, সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, সহকারী শিক্ষক সমাজ-২, সহকারী শিক্ষক সমিতি, সহকারী শিক্ষক সমাজ-৩, সহকারী শিক্ষক সমিতি-২, সহকারী শিক্ষক ফোরাম, সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষক সমিতির চারটি সংগঠন এ কর্মসূচিতে ঐক্য প্রকাশ করেছে।
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষকরা পাটি, পত্রিকা বিছিয়ে বসে রয়েছেন। পুরুষদের সঙ্গে দূরদূরান্ত থেকে নারীও এসেছেন আমরণ কর্মসূচিতে।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণে এর আগে উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় পর্যায়ে উপপরিচালকদের (প্রাথমিক শিক্ষা) কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দাবি আদায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।