নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে হারে বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে, পৃথিবীর কোনো দেশে তা হয়নি। এখন দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এটা আর কোনোভাবে যেন না হয়।
গতকাল রোববার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সচিবসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে এটি ছিল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আমলাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে, কিন্তু সচিবদের আরও অনেক দীর্ঘ সময় ধরে দেশকে সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকে। কাজেই দেশ কীভাবে চলবে, সেটা সচিবদের ওপরই নির্ভর করে। এ সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে, কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। শেষ দিকে তাড়াহুড়ো না করে অর্থবছরের শুরু থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সচিবদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের শেষ দিকে তাড়াহুড়ো না করে অর্থবছরের শুরু থেকেই উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করুন। কারণ বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে হবে। অর্থবছরের শেষ দিকে তাড়াহুড়া না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করুন।
গত ১ জুন চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা; যার এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে। কিন্তু কোনো বছরই শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয় না এবং অর্থবছরের শেষ দিকে তড়িঘড়ি অর্থ খরচ করা হয়। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা গেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে চার শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে গ্রাম উন্নয়ন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানো, দুর্নীতি রোধ, সুশাসন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে তা বাস্তবায়নে শীর্ষ আমলাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হন। গ্রাম উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যাতে গ্রামের মানুষ কাজের খোঁজে শহরে না আসে। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। দক্ষ এবং যোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া, ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত, অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
সুশাসন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য কমাতে হবে। সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। একই সঙ্গে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা সচিবদের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, তার দলের রাজনৈতিক দর্শন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি একটি ভালো দলের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। দক্ষ এবং যোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয় তার উদ্যোগ নিন।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড় ও টিলা অধ্যুষিত এলাকায় পরিবেশ রক্ষাসহ ভূমিধস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে আরও আন্তরিক হওয়া, ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ দূষণ রোধে রাজধানীর হাজারীবাগের যে ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে, সেগুলো যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা জোরদার করা, বঙ্গোপসাগরের যে এক হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, অংশীদারিত্বমূলক ব্লক বাগান ও স্ট্রিপ বাগান সৃজন করা, বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করা, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করা, অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দেওয়া, জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির সফল বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রদান করেন।
বৈঠকের শুরুতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলতে সরকারের সংস্কার কর্মসূচির উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম স্বাগত বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment