বেতন-ভাতায় ব্যয় বৃদ্ধি ১৫০% সুদ পরিশোধে বেড়েছে ১৮৮%

ইসমাইল আলী: আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে গত ৯ জুন। এর মধ্যে সরকারের পরিচালন বাজেট চার লাখ ১৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার। এ বাজেটের সবচেয়ে বড় দুই খাত সুদ পরিশোধ ও সরকারের বেতন-ভাতা। পরিচালন ব্যয়ের ১৯ দশমিক ২১ শতাংশ তথা ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা যাবে সুদ পরিশোধে। আর ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ তথা ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা যাবে বেতন-ভাতায়।

যদিও এ চিত্র নতুন নয়। প্রতি বছর পরিচালন বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশই যায় সরকারের সুদ পরিশোধ ও বেতন-ভাতা খাতে। এছাড়া এ দুই খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছেই। এর মধ্যে পাঁচ বছরেই বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় বেড়ে প্রায় দেড় গুণ বা ১৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ হয়েছে। তবে তিন বছর পর অর্থাৎ আট বছরে তা আরও বেড়ে দাঁড়াবে ২০৯ শতাংশ। ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫’ শীর্ষক বাজেট প্রকাশনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে সুদ পরিশোধ ব্যয় পাঁচ বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৮৮ শতাংশ। এ সুদ পরিশোধের ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি যায় সরকারের অভ্যন্তরীণ তথা ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে। বাকিটা বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২তে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তথ্যমতে, বেতন-ভাতা খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর সরকারের ব্যয় ছিল ৪৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। কভিডের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছর সরকার নানা খাতে ব্যয় কাটছাঁট করে। তবে সরকারের সে কৃচ্ছ্র  নীতির প্রভাব দেখা যায়নি বেতন-ভাতা খাতে। সে অর্থবছর এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।

এদিকে আগামী অর্থবছর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় আরও বেড়ে ৭৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই ধারা অব্যাহত থাকবে পরের দুই অর্থবছরও। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছর বেতন-ভাতা ব্যয় বেড়ে ৮৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছর তা আরও অধিক হারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই অর্থবছরের জন্য এ ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৯৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, রাষ্ট্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ নিয়মিতই বাড়ছে। সরকার নানাভাবে আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে। আর এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এত টাকা বেতন-ভাতা নেয়ার পরও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি থেমে নেই। আবার নতুন পে-স্কেলের জন্য আমলারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। দিন দিন তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছেন, যা সুশাসনের জন্য অন্তরায়।

অন্যদিকে সুদ পরিশোধ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর সরকারের ব্যয় ছিল ৩৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় ৩৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় দুই হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর সুদ পরিশোধ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় তিন হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর সুদ পরিশোধ ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় চার হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। কভিডকালে সরকারের ঋণ গ্রহণ থেমে থাকেনি। তাই সুদ পরিশোধ ব্যয়ও কমেনি। এতে ২০২০-২১ অর্থবছর এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ছিল ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ রয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ রয়েছে ছয় হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০