পূর্বের প্রকাশের পর …….
১৭২০ সালের আগেই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দামি কোম্পানি ছিল সাউথ সি। ওই কোম্পানির কিছু শেয়ার কিনেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা চিন্তাবিদ স্যার আইজ্যাক নিউটনও। একবার আকস্মিকভাবে দরপতন শুরু হলে তিনি বেচে দেন সাউথ সি’র সব শেয়ার। বিস্মিত নিউটন শতভাগ মুনাফায় আয় করেন সাকুল্যে সাত হাজার পাউন্ড। শেয়ারের দাম কমার পরও তার কেন লাভ হলো, এটা বুঝতে না পেরে এই মহান পদার্থবিদ নাকি তার এক বন্ধুকে বলেছিলেন ‘মহাবিশ্বের সব জাগতিক বস্তুর গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা সম্ভব; কিন্তু শেয়ারবাজারের মন কিছুতেই নয়।’ বিপত্তি ঘটলো এর পর। হুট করে বাড়তে শুরু করলো সাউথ সি’র শেয়ারদর। তাড়াহুড়ো করে অন্যদের দেখাদেখি বেশকিছু শেয়ার কিনে পরবর্তীতে বিক্রি করে ধরা খেলেন আনুমানিক ২০ হাজার পাউন্ড। এতে প্রচণ্ড হতাশ হন নিউটন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত যদি ব্যর্থও হয়ে থাকেন, তার মানে এই নয় যে আপনি বোকা; আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এর কারণ হলো, সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য যে মানসিক শৃঙ্খলার প্রয়োজন, তা আপনার নেই। যা ছিল না নিউটনেরও।
আজকের পিই রেশিও আগামীর আয়ের নিশ্চয়তা দেয় না সতর্কতার সঙ্গে গ্রোথ স্টক বাছাই
মনে মনে প্রত্যেক বিনিয়োগকারী কামনা করেন, তিনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, তার পারফরম্যান্স যেন (নির্দিষ্ট সময়কালে) বাজারের গড়মানের চেয়ে ভালো হয়। গ্রোথ স্টক হলো সেই শেয়ার যা অতীতে সেই আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে বলে প্রমাণিত এবং ভবিষ্যতেও একই পারফরম্যান্স দেখাবে বলে প্রত্যাশিত। এমন স্টক বাছাই করা জটিল ও কষ্টসাধ্য; যদিও সাধারণ দৃষ্টিতে অনেকের ধারণা জন্মাতে পারে, কোনো সমস্যাই নয় এটা। কেননা কাজটি আসলে পরিসংখ্যানমূলক। যেকোনো ব্রোকারেজ হাউজে যান, বাজার গড়ের চেয়ে ভালো করছে এমন ৫০-৬০টি কোম্পানির নাম ধরিয়ে দিতে পারবে আপনার হাতে। সেখান থেকে ১৫-২০টি কোম্পানিকে চিহ্নিত করলেই, ব্যস, ল্যাঠা চুকে গেল, সফল আক্রমণাত্মক পোর্টফোলিও তৈরি। তবে বাস্তবতা এরূপ নয়। এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা দুটি: এক. ভালো পারফরম্যান্স দেখানেওয়ালা অর্থাৎ যেসব কোম্পানির কমন রেকর্ড ভালো ও ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সেগুলো ভালো দামে বিক্রি হয় সাধারণত। অথচ আমাদের আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারী ভালো শেয়ার তো কিনবেন বটেই, কিন্তু সেটি কম দামেই কিনতে হবে তাকে। নইলে শেয়ারের প্রাক্কলিত দামের ফুল-পেইড বা ওভার-পেইড হয়ে যেতে পারে। দুই. কোনো কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কাক্সিক্ষত নিশ্চয়তা তাকে কে দেবে? বিনিয়োগকারীর আপন বিবেচনা কি সর্বদা অভ্রান্ত? লক্ষ করুন, কোনো কোম্পানি দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে মানে এরই মধ্যে বড় হয়েছে তার আকার। ফলে ওই কোম্পানিতে আর কতটা মূলধন গেলে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন (মুনাফা বৃদ্ধি) সর্বোচ্চ হবে, সেটি নির্ধারণ করা দুষ্কর। বাইরের লোকের পক্ষে কাজটি করাও কঠিন। অথচ এ অনুসন্ধান সম্পন্ন না হলে শঙ্কা কিন্তু রয়েই যায় যে, আপনার বিনিয়োগের পরই বিনিয়োগ সমতল হতে হতে একেবারে নি¤œমুখী পদচারণ শুরু করে দিয়েছে। তাই সাবধান। শুধু অতীত বিশ্লেষণ করে কোনো গ্রোথ স্টক বাছাই করবেন না। আমি দেখেছি, যারা কেবল অতীত-নির্ভর গ্রোথ স্টক বাছাই করে তা হয় জেতে, নয়তো ভূত হয় হেরে।
গ্রোথ স্টক বাছাই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছিল ইনভেস্টমেন্ট স্টক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আর্থার ওয়াইজেনবার্গার অ্যান্ড কোম্পানি। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ১২০টি গ্রোথ ফান্ডের কয়েক দশকের বার্ষিক পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ করে প্রতিষ্ঠানটি। তার মধ্যে ৪৫টি প্রতিষ্ঠান ছিল ওয়ালস্ট্রিটে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচিত। তারা একটি মজার বিষয় আবিষ্কার করেছে। সেটি হলো, গ্রোথ ফান্ডও শক-প্রুফ নয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে তাদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিরাট উন্নত নয় বাজারের গড়পড়তা ফলাফলের চেয়ে। লক্ষণীয়, উক্ত ৪৫টি আলোচিত গ্রোথ স্টক ১৯৬১-১৯৭০ সালে মুনাফা করে ১০৫ শতাংশ; যে সময়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ করেছিল ১০৫ শতাংশ মুনাফা এবং ডাউ সূচক ৮৩ শতাংশ। তার মধ্যের দুই বছরে (১৯৬৯-৭০ সাল) উল্লিখিত দুই সূচকের চেয়েই খারাপ পারফরম্যান্স করে সিংহভাগ গ্রোথ ফান্ড। তাই অ্যাগ্রেসিভ গ্রোথ দেখেই কোনো স্টকের ওপর হামলে পড়া যাবে না। আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারীকে অপেক্ষা করতে হবে চিহ্নিত কোম্পানির সঠিক মূল্যায়ন পেতে। তার পরই হলো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত। মনে রাখা দরকার, আজ পর্যন্ত সফল কেউই ‘ইউরেকা’ ‘ইউরেকা’ বলে দৌড়ায়নি ওয়ালস্ট্রিটে।
গ্রোথ স্টকে বিনিয়োগের ব্যাপারে বেশি সাবধান হতে বলছি আরেকটা কারণে। গ্রোথ স্টক থাকার মানেই হলো, বিনিয়োগকারীর মধ্যে প্রলোভন সৃষ্টির মতো বিপণন করার আর্থিক ও মানসিক পুঁজি দুটোই আছে ওসব কোম্পানিতে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ভাবুন আর যা-ই ভাবুন, আমি নিজ অভিজ্ঞতায় বেশকিছু গ্রোথ কোম্পানিকে দেখেছি, যেখানে বিনিয়োগকারীর মন বুঝতে বিখ্যাত বাজার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মোটা বেতনে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন হবে আপনার পক্ষে। অবশ্য আমি একটা উপায় বের করেছি। সেটি হলো : যদি দেখেন বাজার কোনো কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে আস্থাবান এবং তাদের চলতি প্রাইস/আর্নিং (পিই) রেশিও ২০’র বেশি। তবে এ পরামর্শ আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারীর জন্য। পিই রেশিও ২৫’র নিচে রেখে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না রক্ষণাত্মক বিনিয়োগকারীদের। আর এই রেশিওটা কেবল এক বছরের নেবেন না। কারণ বিশ্বাস নেই, হয়তো ওই কোম্পানি বেশি দামে স্টক বিক্রির অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বাড়িয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে! একটি হিসাব: মনে করুন, কোনো কোম্পানির ৩ ডলার শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে গত ১২ মাসে। অথচ শেষ ৬ বছরের হিসাবে এই আয় মাত্র ৫০ সেন্ট। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কীভাবে কোম্পানিটির পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করবেন ৬ বছরের ৫০ সেন্ট দিয়ে, নাকি ১২ মাসের ৩ ডলার দিয়ে। দেখুন, শেয়ারপ্রতি আয়ের ২৫ গুণ ধরলে সর্বসাম্প্রতিক বছরে ওই শেয়ার কেনা যেতে পারে সর্বোচ্চ ৭৫ ডলার দামে। কিন্তু যদি সর্বসাম্প্রতিক ৭ বছরের হিসাব আমলে নিই, তাহলে শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য হয় মাত্র ২১ ডলার ৪৩ সেন্ট। বিরাট ব্যবধান। সুতরাং মাথায় রাখবেন, আজকের পিই রেশিও আগামী দিনের আয়ের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়।
আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারীর সম্ভাব্য তিনটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্র
একজন আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারীর শেয়ার পোর্টফোলিও পরিকল্পনা বা কর্মসূচির কমপক্ষে দুটি গুণ থাকা আবশ্যক: এক. তিনি যে কোম্পানিকে বাছাই করবেন, সেটিকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। আর বিনিয়োগকারী নিজে সে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন যৌক্তিকভাবে ও বস্তুনিষ্ঠ উপায়ে। দুই. অন্যান্য ফাটকাবাজ বা সিংহভাগ বিনিয়োগকারী গৃহীত পরিকল্পনার চেয়ে স্বতন্ত্র হতে হবে আপনার পরিকল্পনা। এটি পরিকল্পনার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। অভিজ্ঞতা ও গবেষণা থেকে আমার উপলব্ধি হলো, তিনটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্রে একজন আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারীর তিনটি ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। পদ্ধতিগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির সুস্পষ্ট ব্যবধান আছে। আবার একেকটি প্রয়োগের জন্য চাই একেক ধরনের মেজাজ ও জ্ঞান-বুদ্ধি।
তুলনামূলক কম জনপ্রিয় কোম্পানি
পুঁজিবাজারের কিছু বদ অভ্যাস আছে। তার অন্যতম হচ্ছে, যখনই এখানে কোনো কোম্পানি আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করে কিংবা কোনো গ্লাম্যারাস কোম্পানি বাজারে আসে, তখনই এর প্রতি অতিরিক্ত পক্ষপাত প্রদর্শন করে বাজার। ঠিক তখনই অতিমূল্যায়িত হয় কিছু কোম্পানির শেয়ার। একইভাবে কিছু কোম্পানির শেয়ারের অবমূল্যায়ন ঘটানোও বাজারের স্বভাব। অথচ এই অবমূল্যায়িত শেয়ারের মধ্যেও কিছু কোম্পানির শেয়ার রয়েছে, যেগুলো সাময়িকভাবে অসন্তোষজনক পারফরম্যান্স করেছিল বলেই তাদের এমন অবমূল্যায়ন। বাজারকে গালাগাল করে লাভ নেই। এটি তার মৌলিক আইন। এখন আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারীকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো, ওইসব অবমূল্যায়িত শেয়ারের মধ্যে থেকে খুঁজে খুঁজে তুলনামূলক বৃহৎ কোম্পানি বাছাই করতে হবে যেগুলো সম্প্রতি অজনপ্রিয়। প্রশ্ন তুলতে পারেন, অজনপ্রিয় ছোট কোম্পানি নির্বাচন করলে কী এমন ক্ষতি হতো? প্রতিশ্রুতিশীল ছোট কোম্পানি নির্বাচনে ক্ষতি নেই, তবে অপেক্ষাকৃত বড় কোম্পানি নির্বাচনের প্রধান সুবিধা হলো, কোম্পানির আকার বড় হওয়ার মানে যতই নিচে নামুক, আয় ও শেয়ারে মূল্য সংযোজনের ক্ষমতা তাদের বেশি। ছোট কোম্পানির মুনাফা প্রদানের ক্ষমতা সাধারণভাবে কম; উল্টো ঝুঁকি বেশি। যেমন, বাজার চাইলে অজানা কারণে একটি ছোট কোম্পানিকে দীর্ঘদিন দমিয়ে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা ভালো করতে থাকলেও উপযুক্ত মূল্যায়ন পাবে না। কিন্তু বড় কোনো কোম্পানি খারাপ অবস্থা থেকে খানিকটা ভালো পারফরম্যান্স দেখালেই তার উত্থান ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। আরও আছে। কাক্সিক্ষত মুনাফা দেওয়ার জন্য দরকারি পুঁজি ও সেই পুঁজি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত জনবলও বেশি থাকে বড় কোম্পানির। তবে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় বড় কোম্পানি বাছাইয়ের বেলায় একটি বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেটি হলো, অনেক সময় দেখা যায় অজনপ্রিয় কিছু বড় কোম্পানিকে আপনি সম্ভাবনাময় বলে চিহ্নিত করলেন, অথচ কোম্পানিটি অন্তর্নিহিতভাবে ফাটকাবাজ। তার মানে ফাটকাবাজির মাধ্যমেই মাঝেমধ্যে উপরে ওঠে। আবার বাজার শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিচে নামে। এদের উদ্দেশ্য, পুঁজিবাজার থেকে মূলধন গঠন নয়; বরং আপনার টাকায় ফাটকা ব্যবসা। সৌভাগ্যবশত এদের চেনার একটি উপায় বিদ্যমান। যদি দেখেন চাঙ্গা বাজারে কোনো কোম্পানির মুনাফা কম, অথচ মাল্টিপ্লায়ার বেশি এবং মন্দা বাজারে একই কোম্পানির শেয়ারের মুনাফা বেশি ও মাল্টিপ্লায়ার কম মোটামুটি নিশ্চিত থাকুন, ফাটকাবাজের পাল্লায় পড়েছেন আপনি। উল্লেখ্য, এখানে মাল্টিপ্লায়ার বলতে বোঝানো হচ্ছে আর্নিং মাল্টিপ্লায়ারকে। এটি পিই রেশিও এবং কোম্পানি প্রদত্ত চলতি মুনাফা হারের এক ধরনের সমন্বয়, যেখান থেকে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির ভবিষ্যৎ আর্নিং বিষয়ে আভাস মেলে।
বারগেইন ইস্যু কেনা
নানা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন থেকে ধারণা করা যায়, বারগেইন ইস্যু হচ্ছে এমন শেয়ার। এগুলো বেচার চেয়ে পোর্টফোলিও’তে ধরে রাখাই উত্তম। এ ক্যাটাগরিতে পড়ে বন্ড, প্রেফারড স্টক এবং অবশ্যই কমন স্টক। প্রথম প্রশ্ন, বারগেইন ইস্যু চিনবেন কীভাবে? একটি শেয়ার ততক্ষণ পর্যন্ত বারগেইন ইস্যু হয়ে ওঠে না, যতক্ষণ না এর ইন্ডিকেটেড ভ্যালু (সূচকীয় মূল্য) শেয়ারটির দামের অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি হয়। দ্বিতীয় প্রশ্ন, কী উপায়ে বারগেইন ইস্যু বাছাই করা উচিত? তৃতীয় প্রশ্ন, শেয়ারের দাম নিয়ে দর কষাকষি কোনভাবে ঘটে এবং তা থেকে মুনাফাই-বা কীভাবে বাড়াতে পারেন একজন আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারী?
বারগেইন ইস্যু বাছাই করার পদ্ধতি একেক বিনিয়োগকারীর কাছে একেক রকম। আমি দু’টি পদ্ধতি জানি।
এক. কোনো স্টকের ভবিষ্যৎ আর্নিং প্রাক্কলন করে সেটিকে ওই নির্দিষ্ট ইস্যুর ভগ্নাংশ দিয়ে গুণ করুন। যদি প্রাপ্ত ফল শেয়ারটির বর্তমান মূল্যের আশানুরূপ উপরে অবস্থান করে এবং আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন যে, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগে কোনো ভুল ছিল না, শেয়ারটির পাশে নোট লিখুন বারগেইন ইস্যু।
দুই. কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করুন, আসলে ইস্যুকারী কোম্পানি কেমন গুরুত্ব দিচ্ছে শেয়ারটিকে। মনে মনে ধারণা করলে হবে না। মনোযোগ দিন বাজার উত্থানপতনের সঙ্গে কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য, নিট কারেন্ট অ্যাসেট কিংবা ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের তেমন পরিবর্তন ঘটছে কি না। যদি দেখেন, বাজার ওঠানামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাচ্ছে নির্দেশকগুলো, বারগেইন ইস্যু ওটি। বারগেইন ইস্যু বেশি মেলে সাধারণত মন্দা বাজারে। তবে মাঝেমধ্যে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শক্তিশালী ইস্যুও চলে আসতে পারে দর কষাকষির পর্যায়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রভাবশালী মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন খ্যাতনামা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি পিফিজারের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল ১৯৯৮ সালে। বিস্তারিত মামলায় বলা হয়, মিলনরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী চার ব্যক্তি পিফিজারের তৈরি যৌন উত্তেজনাবর্ধক ওষুধ ভায়াগ্রা সেবন করেছিলেন। আসলে নিশ্চিত ছিলেন না কেউই। তবু বারগেইন লেভেলে চলে আসে পিফিজারের শেয়ার। পরবর্তী সময়ে যখন জানা গেল, আসলে ওই ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ ভায়াগ্রা নয়, হু হু করে বাড়ছিল পিফিজার শেয়ারের দাম। আর ওই সীমিত সময়ে যেসব আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারী বারগেইন লেভেলে পিফিজারের শেয়ার কিনে রেখেছিলেন, লাভবান হতে থাকলেন তারা। কিছু ক্ষেত্রে ওভাবে বারগেইন ইস্যু বাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ সুষ্ঠু প্রতিযোগিতায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার মতোই থ্রিলিং। তবে মন্দা বাজারে সে প্রচেষ্টা নেওয়ার জন্য বুকে যথেষ্ট সাহস থাকা দরকার; সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক সময় নির্ণয়ের বুদ্ধি ও উপযুক্ত টাইমিং করার দক্ষতা। আরেকটি বিষয়। কিছু কোম্পানির শেয়ার দেখবেন নিট ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়। এখানে নেট ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলো, কোনো কোম্পানির নগদ অর্থের মতো চলতি সম্পদ, বাজারজাতকরণের যোগ্য সিকিউরিটিজ ও ইনভেন্টরি থেকে মোট দায় (প্রেফারড স্টক ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণসহ) বিয়োগ করলে যা থাকে, সেটি। এ ধরনের বারগেইন ইস্যুর বাড়তি সুবিধা হলো, আপনাকে কোম্পানির ফিক্সড অ্যাসেটের (ভবন, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি) ব্যয়ভারে অংশ নিতে হবে না আপনাকে। তদুপরি স্থিতিশীলভাবে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায় এ ধরনের বারগেইন ইস্যুতে বিনিয়োগ থেকে। মনে হতে পারে, এমন কোম্পানি কোথায় পাব। অথচ চোখকান খোলা রেখে একটু বাজার ঘুরলেই দেখবেন অনেক রয়েছে ওই ধরনের কোম্পানি।
বিশেষ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ
‘বিশেষ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ’ বলে টার্ম কিছুদিন আগেও ছিল না ওয়ালস্ট্রিটে। অথচ এ পদ্ধতির মুনাফা হার (রেট অব রিটার্ন) অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আরও তাৎপর্যপূর্ণ যে, মন্দা বা চাঙ্গা যেকোনো বাজারেই তৈরি হতে পারে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’। পন্থাটি অবৈধ বা অনৈতিক নয়। তবু এটি দীর্ঘদিন বিনিয়োগ সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তকের অগোচরে থেকে যাওয়ার প্রধান কারণ, অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’র শেয়ার কেনার দক্ষতা সৃষ্টি হয়নি। এর উদ্ভাবক মূলত কম শিক্ষিত অথচ ঝানু ওয়ালস্ট্রিট বিনিয়োগকারীরা। যেহেতু স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত বিনিয়োগকারীদের অনুশীলন ক্ষেত্র ছিল, সুতরাং একে ওসব পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ অনুভব করেননি অনেক লেখক। এ নিয়ে শুরুতে কিছু কথা হয়েছে। কোনো বড় কোম্পানি ক্ষুদ্র কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করলে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সে কথাও আমি বলেছি এ বইয়ের পূর্ববর্তী অধ্যায়ে। তবে নির্দিষ্ট প্রকারভেদে বিশেষ পরিস্থিতিকে আবদ্ধ করা দুষ্কর। যেমন ১৯৫০ ও ৬০’র দশকে আলোচিত বিশেষ পরিস্থিতি ছিল দেউলিয়া হওয়ার আগেভাগে কোনো কোম্পানির সিকিউরিটিজ কিনে নেওয়া। আবার এক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রবণতাও দৃশ্যমান।
Add Comment