বেনাপোলে জাল ভ্রমণ কর চক্রের দুই সদস্য আটক

প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর): আন্তর্জাতিক বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ভ্রমণ কর ফাঁকি ও জাল করোনা সনদ বন্ধে কঠোর হচ্ছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। জাল ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনায় দুইজনকে আটকের পর এ ঘটনা তদন্তে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়াকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিদেশ ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনের নামে মামলা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মামলার পর শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ গ্রিন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন ও গতকাল শনিবার সকালে একই পরিবহন স্টাফ মোহনকে আটক করে যশোর আদালতে পাঠায়। পলাতক রয়েছেন মামলার অন্যান্য আসামিরা।

পলাতক আসামিরা হলোÑহানিফ পরিবহনের বেনাপোল শাখা অফিসের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান আলী, বড় আঁচড়া গ্রামের মিলন খান, সাদিপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন, মমিনের ছেলে শামীম হোসেন, বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্টের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন ও মনিরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন।

জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্টের আসপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্রায় কম্পিউটার, মোবাইলের দোকান ও ফটোকপিসহ বিভিন্ন নামের এন্টারপ্রাইজের দোকানে এসব জাল ভ্রমণ কর ও জাল করোনা সনদ তৈরি করা হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে জাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও বরাবরই তারা ছিল নীরব।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ জানায়, কাস্টম কমিশনারের নির্দেশে গোপন সংবাদের পেয়ে কাস্টমসের একটি টিম বৃহস্পতিবার বিকালে আন্তর্জাতিক কাস্টমস চেকপোস্ট বহির্গমন স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স রিসিট অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যান করে যাচাইকালে বেশ ক’টি রিসিট জাল প্রমাণিত হয়।

পরে কর্মকর্তারা গ্রিন লাইন পরিবহনের ১৩ জন, হানিফ পরিবহনের ৮ জন, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ৭ জন যাত্রীর ট্রাভেল ট্যাক্স রিসিটি পরীক্ষা করে জাল প্রমাণ পায়। গ্রিন লাইনের ১৩ জন যাত্রীই জানান, যে তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স রিসিটিগুলো গ্রিন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন, অফিস পিয়ন মোহন মিয়া এবং তাদের অফিস স্টাফরা তাদের কাছ থেকে ভ্রমণ করের  টাকা নিয়ে জাল রিসিট দেয়।

হানিফ এন্টার প্রাইজের ৮ জন যাত্রী জানান, তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স ওই পরিবহনের ম্যানেজার নজরুল, অফিস পিয়ন মিলন খান এবং তাদের স্টাফরা তাদের দিয়েছেন।

পুলিশ আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এফ এম আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।ি তনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাসপোর্ট যাত্রীদের ভ্রমণ কর ৫০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল এ চক্রটি। 

তাৎক্ষণিক বেনাপোল পোর্ট থানায় বিষয়টি অবগত করলে পুলিশ সদস্যরা আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টম বেনাপোলে এসে এসব যাত্রীর কাছ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জাল ট্রাভেল ট্যাক্স পে শ্লিপের (বাই ল্যান্ড) ২৯ পাতা এবং ১১ জন যাত্রীর বিবৃতি মোট ৫ পাতা গ্রহণ করেন।

পরে পুলিশ ও কাস্টমস যৌথ অভিযানে চেকপোস্টে একটি কম্পিউটার দোকান থেকে জাল ট্রেজারি পূরণকৃত চালান ফরম ২ পাতা এবং ১টি হিটাচি ব্র্যান্ডের এ ইউজি-২০১০ মডেলের হার্ডডিস্ক, ১টি ডব্লিউডি ব্ল– ডেস্কটপ হার্ড ড্রাইভ, ১টি ডব্লিউডি গ্রিন সাটা এসএসডি, ১টি লেজার সলিড স্টেট ড্রাইভ জব্দ করে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়া জানান, সরকারের বিদেশ ভ্রমণ কর জাল জালিয়াতির সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। আগে এ ধরনের জালিয়াতি করে যারা ভ্রমণ কর জাল করেছেন, তাদের কাছ থেকে ফাঁকি দেয়া টাকা আদায় করা হবে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কামাল হোসেন ভুঁইয়া জানান, ভ্রমণ কর জাল করে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় কাস্টমসের দেয়া মামলায় জালিয়াত চক্রের ৯ জন আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন আসামিকে আটক করা হবে। ইতোমধ্যে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে করোনা জাল সার্টিফিকেট তৈরির জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০