প্রতিনিধি, বেনাপোল : বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকায় ভয়াবহ যানজটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। বন্দর থেকে খালাসকৃত পণ্য সময়মতো পরিবহন করতে না পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া। যানজটে সড়কে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ভারতগমনকারী পাসপোর্ট যাত্রীরাও। ফলে আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খুব একটা নজরদারি নেই। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন বন্দর এলাকায় যানজট নিরসনে তারা জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এসব কর্মকাণ্ড শেষ হলে অনেকাংশে যানজট নিরসন সম্ভব বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান।
জানা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫/৬শ’ পণ্য বোঝাই ট্রাক মালামাল ভারতে আমদানি রফতানি হয়ে থাকে। এসব ট্রাক আমদানি-রফতানির সময় বন্দর এলাকায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। বন্দরের নিজস্ব কোনো ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃস্টি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সরজমিনে দেখা যায়, বেনাপোল সড়কে দিন-রাত আমদানি পণ্যের যানজট লেগেই আছে। বন্দর থেকে আমদানিপণ্য খালাস নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। ব্যস্ততার কারণে বাধ্য হয়ে ছোট-খাট যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলছে ফুটপাতের ওপর দিয়েই। ফলে পৌরসভার মধ্যে নির্মিত ফুটপাতগুলো ভেঙেচুরে পথচারী চলাচলে বিঘিœত হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে যানজটের এ ভয়াবহ অবস্থা লেগেই আছে যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে আমদানি করা ট্রাক ও বাস চেসিজগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের নিজস্ব জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর দিয়েই ৮০ শতাংশ শিল্প-কলকারখানার কাঁচামাল আমদানি করে থাকেন। দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। মাত্র চার ঘণ্টায় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে একটি পণ্য চালান ভারতের কলকাতা থেকে পেট্রাপোল স্থলবন্দর হয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে পারে। একই সময়ে বেনাপোল বন্দর থেকে রফতানি করা বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে ট্রাক পৌঁছায় কলকাতা শহরে। ভারতের সঙ্গে এ কারণে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে সরকার সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। বেনাপোল বন্দরে যানজটসহ অবকাঠামোগত তেমন একটা উন্নয়ন না হওয়ায় বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে দু’দেশের মধ্যে আমদানি রফতানি বাণিজ্য।
বেনাপোল শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন জানান, বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে যানজটে আটকে থাকতে হয় দুই ঘণ্টার বেশি। ফলে তারা যাত্রীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারেন না। বন্দরের নিজস্ব কোনো টার্মিনাল না থাকায় খালি ট্রাকগুলো ফেলে রাখা হয় যত্রতত্র। ফলে যানজট লেগেই থাকে দিনের পর দিন।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন জানান, বর্তমানে বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার টন থাকলেও পণ্য রাখা হয় এক থেকে দেড় লাখ টন। বন্দরে স্থান সংকটের কারণে ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্য বোঝায় ট্রাকগুলো পণ্য আনলোডের জন্য দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দর এলাকায়। আমদানিকারকরা ট্রাক ড্যামারেজের কারণে মোটা অঙ্কের আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়েও বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বর্তমানে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আয় সম্ভব বলে তিনি জানান।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল জানান, যানজট নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যানজট নিয়ে স্থানীয় বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ শেষ হলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।