নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের স্বস্তি আসছে। রেলকার্গোতে এখন থেকে ভারত থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে পারবে। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রেলকার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের অনুমতি দিয়েছে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে সব রকমের পণ্য ভারত থেকে সাইডডোর (পাশে দরজা বিশিষ্ট) রেলকার্গোর মাধ্যমে আনার অনুমতি দেয়া হয়।
## কমবে ট্রাক চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, ব্যবসায়ীদের সময় সাশ্রয় ও খরচ কমবে
## ছয়টি শর্তে করোনাকালীন সময়ের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে
বেনাপোল-পেট্রাপোলের সকল অংশীজন এনবিআরের আদেশের আলোকে নিজ নিজ পণ্য বা কার্গো আমদানি করতে করতে পারবেন। পূর্বে কেবল বাল্ক কার্গো যেমন পাথর, পাথর চিপস্, ধান, চাল রেলে আমদানি হতো। এখন থেকে সব রকমের পণ্য পণ্যবাহী ট্রেনে করে আনা যাবে। তবে করোনাকালীন সময়ের জন্য এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, করোনার শুরুতে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে দু’দেশের উর্ধ্বতন মহল থেকে কয়েক দফা চালু করার নির্দেশনা দিয়েও চালু করা যায়নি। এর পেছনে পেট্রাপোলে ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিকে দায়ি করা হয়। যদি বেনাপোল দিয়ে প্রচুর করোনা রোগী সেদেশে প্রবেশ, মৃত্যুর ভুয়া গুজব তোলা হয়।
সর্বশেষ বেনাপোল কাস্টম রেলকার্গোতে ধানবীজের একটি চালান ১০ মিনিটে শুল্কায়ন করে রেকর্ড করে। এ নিয়ে এনবিআরসহ বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিতে আসে। সর্বশেষ রেলকার্গোতে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেনাপোল কাস্টম হাউস এনবিআরকে চিঠি দেয়। এছাড়া ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশ অনুরোধ জানায়। এরই প্রেক্ষিতে এনবিআর এ অনুমতি দিয়েছে।
আরো পড়ুন-বেনাপোলে ১০ মিনিটে পণ্য শুল্কায়নের রেকর্ড [1]
সূত্র আরো জানায়, রেলকার্গোর মাধ্যমে পণ্য আমদানির নানাবিধ সুবিধা বিদ্যমান। ট্রেন আগমন থেকে ছেড়ে যাবার লিডটাইম নুন্যতম এক পঞ্চমাংশ। এক ওয়াগন ৪ ট্রাকের সমান পণ্য আনতে পারে। রেলকার্গোতে মিথ্যা ঘোষণার সুযোগ কম। ট্রেনে ভাড়া ট্রাকের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। আবশ্যিক পার্কিং, ট্রাকের দীর্ঘসময় অপেক্ষা ও চাঁদা নেই। দিনে ১০০ বগির একটি ট্রেনে ৪০০ ট্রাকের পণ্য আনা যায়।

রেলকার্গোতে অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে- মিথ্যা, অপঘোষণা, চোরাচালানের সুযোগ প্রায় নেই, পণ্য বোঝাই সরকারি ও খোলা জায়গায় হয়। ট্রাকে আনা বাণিজ্যিক পণ্যের ক্রেতা, সিএন্ডএফ, ট্রাকের, বন্দরের, কাস্টমসের, সরকারি অসরকারি অনেককে পাহারা দিতে হবে না। শিল্প, বহুজাতিক ও সুনামধারী প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করে চালবীজের মতো দশ মিনিটে রিলিজ অর্ডার ইস্যু, বেনাপোল স্থলবন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। কাস্টমস ও বন্দর বাড়তি লোকবল ছাড়াই দ্বিগুণ পণ্য ছাড় করতে পারবে। শুল্কায়ন ও খালাস কয়েকদিনের পরিবর্তে ঘন্টায় হবে। আমদানি পণ্য অভিপ্রেত কম সময়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যাবে।

সূত্র আরো জানায়, স্বাধীনতার পর কিছুদিন রেলকার্গো বেনাপোলে নেমেছে। এরপর বেনাপোলে রেলকার্গো হ্যান্ডেলিং বন্ধ। উদ্দেশ্য পার্কিং সিন্ডিকেটের বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি। দেশের ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের অর্ধেকও ট্রেনে হলে আমাদানি ব্যয় ও সময় কমে যাবে। সম্প্রতি চাল, পেঁয়াজ ও ফ্লাই অ্যাশের চালান রেলওয়াগনে আসায় ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি খুলে যায়। এখন দেশের ব্যবসায়ীরা বড়ধরনের চালান রেলে আনতে আগ্রহী এবং ভারতের রপ্তানিকারকরাও গেঁড়াকল থেকে মুক্তি পাবে। তবে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বেনাপোলে রেলকার্গো খালাসের নীতিমালা দ্রুত জারি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রেলকার্গো চালুর অনুমতি দেয়ায় বেনপোলের শিল্প শ্রেণির ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোসহ সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও অংশীজনরা এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি) আকতার হোসেন সই করা আদেশে বলা হয়, কভিড-১৯ সংক্রমণকালীন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রেলপথে আমদানি-রপ্তানি সুগম করতে বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটে পার্শ্ব-দরজা বিশিষ্ট কন্টেইনার ট্রেন চালুর অনুমতি।

বলা হয়, ৪ মে কভিড-১৯ সংক্রমনকালীন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রেলপথে পরিবহনের বিষয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে একটি ভিডিও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ভারতের পক্ষ থেকে রেলপথে সকল ধরনের পণ্য আমদানিতে সহায়তার অনুরোধ করা হয়। বিষয়টি পরীক্ষা করে মতামত প্রদানের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিকে আহ্বায়ক করে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটি কয়েকটি সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করে। সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হলো বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটে পার্শ্ব-দরজা বিশিষ্ট কন্টেইনার ট্রেন চালুর অনুমতি প্রদান। সুপারিশের আলোকে ছয়টি শর্তসাপেক্ষে এ অনুমতি প্রদান করা হলো।
শর্তের মধ্যে বলা হয়, বেনাপোল কাস্টম হাউসকে রেলপথে আমদানি করা পণ্যের কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্নের একটি আর্দশ পদ্ধতি প্রণয়নপূর্বক এনবিআরকে অবহিত করতে হবে। পণ্য আমদানির পূর্বে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে বন্দর অভ্যন্তরে পণ্যের অবতরণ, সংরক্ষণ ও কায়িক পরীক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় পূর্তকাজ সম্পন্ন করতে হবে।
আরো রয়েছে-সকল পণ্য সহকারী কমিশনার বা উপকমিশনারের উপস্থিতিতে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ঘোষণার যথার্থতা যাচাই ও যথাযথ শুল্ককর আদায় নিশ্চিতকল্পে আইনানুগ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমদানি নীতি আদেশসহ সকল আইন ও বিধি-বিধান পরিপালন করতে হবে। কভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সাইড ডোর কন্টেইনার ট্রেন চলাচলের বিষয়টি পুন: পর্যালোচনা করতে হবে। এ লক্ষ্যে রেলপথে আমদানি-রপ্তানির তথ্য নিয়মিতভাবে এনবিআরকে অবহিত করতে হবে।
###