অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ৫০০ কোটি টাকা

প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর): চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টম হাউসে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে এক হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। তবে ২০১৯-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের চেয়ে ১০১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ওই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।

জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আর রপ্তানি হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে আমদানি কিছুটা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩২ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমদানি পণ্য থেকে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি হলেও ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮তে ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এদিকে চলতি বছরে এত বড় অঙ্কের লক্ষ্য আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে সব মহলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাস্টমস ও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে কখনও এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।

জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ী চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বারবার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানান, চলতি অর্থবছরে এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ একদিকে করোনা পরিস্থিতি ও অন্যদিকে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের।

তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। তবে বেনাপোল বন্দর উন্নয়ন ভারতে হয়রানি বন্ধ হলে এ বন্দর থেকে লক্ষ্য মাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষ্যে সম্ভব।

আমদানিকারক মামুন বাবু জানান, ভারতের কালিতলায় পার্কিংয়ের নামে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে মোট অঙ্কের চাঁদাবাজি করছে। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজির পরও এসব ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে সময় লাগছে ১-২ মাস। প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ২ হাজার রুপি দিতে হয়। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বারের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সেখানেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান; তাই ব্যবসায়ী দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, শুধু ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে আমদানিবাহী গাড়ি আটকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া গত আড়াই মাস বেনাপোল বন্দর দিয়ে সয়াবিন এক্সট্রাক্ট রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমে গেছে। বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে কয়েক বছর ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তারপরও চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আমরা গত বছরের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছি। প্রবৃত্তির হারও বেশি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০