- দুদকের মহাপরিচালক পরিচয়দাতা আহসান আলীর দুরভিসন্ধিমূলক বেনামি চিঠির কারণে রাজস্ব প্রশাসনে অস্থিরতা ও রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হচ্ছে
- আহসান আলীকে আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এভাবে সাজানো বেনামি অভিযোগ দিয়ে রাজস্ব আদায়ে কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে
প্রতিনিধি, বেনাপোল:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (ডিজি) সেজে ভায়াগ্রা নামক ক্ষতিকর মাদকের চালান ছাড় করাতে তদবির করেন সাবেক এক উপপরিচালক। কোনো আবদার আর তদবির না রাখায় কাস্টমস কমিশনারের নামে দুদকে দেওয়া হয়েছে বেনামি চিঠি। সে চিঠির সূত্র ধরেই কমিশনারকে করা হচ্ছে হয়রানি। যার ফলে আমদানি-রফতানিতে পড়েছে প্রভাব। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজস্ব আহরণ। রাজস্ব ক্ষতি রোধে বেনামি চিঠির নামে কমিশনারকে হয়রানি বন্ধ ও অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল সংগঠনের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
অন্যদিকে দুদকের মহাপরিচালক পরিচয়দাতা সাবেক উপপরিচালক আহসান আলীর দুরভিসন্ধিমূলক বেনামি চিঠির কারণে রাজস্ব প্রশাসনে অস্থিরতা ও রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হচ্ছে বলে বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আহসান আলীকে আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এভাবে সাজানো বেনামি অভিযোগ দিয়ে রাজস্ব আদায়ে কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা চেয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার।
সংবাদ সম্মেলনে সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, আহসান আলী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে দুদকের মহাপরিচালক পরিচয় দিয়ে সরকারের ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীকে চাপ প্রয়োগ করেন। পরবর্তীতে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা দুই হাজার ৫০০ কেজি ভায়াগ্রার চালান আটকের পর তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়ে কমিশনারের বিরুদ্ধে দুদকে বেনামি চিঠি দেন। মিথ্যা অভিযোগে কমিশনারকে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত রাখায় বন্দরে কড়াকড়ির ফলে পণ্য অমদানি এক ধরনের বন্ধ হয়ে যায়। আমদানিকারকরা চলে যান অন্য বন্দরে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে।
তিনি বলেন, এ বন্দর দিয়ে প্রতি বছর ভারতের সঙ্গে ৩০ হাজার কোটি টাকার আমদানি-রফতানি হয়। প্রতি বছর বেনাপোল কাস্টম হাউস সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করে। বেনাপোল বন্দরে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে কমিশনার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কমিশনার বেলাল হোসাইন আসার পর বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন, যানজট নিরসন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কাস্টমসে বেনাপাস, শুল্কায়ন গ্রুপ বিভাজন, ফোল্ডার ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করেছেন। চেকপোস্টে বহিরাগত ও দালালমুক্ত করতে নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও সক্ষম হয়েছেন। সে জন্য কমিশনারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কিছু অসাধু ব্যক্তি প্রশ্নবিদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগের অবতারণা করে চলেছেন।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্য গতিশীল করতে কাস্টমস কমিশনারকে অহেতুক হয়রানি বন্ধে আহসান আলীকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা, সাবেক সভাপতি শামছুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিলন, জামাল হোসেন, কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবর বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, গত এক মাস ধরে গণমাধ্যমে বেনাপোল ও বেনাপোলের কমিশনারকে নিয়ে লেখালেখি ও অপপ্রচার হচ্ছে। একটি সাজানো ও বেনামি চিঠি নিয়ে এসব সংবাদ ও প্রচারণা। ভুয়া ডিজি পরিচয়দাতা সাবেক উপপরিচালক আহসান আলী এ বেনামি চিঠি তৈরি করে শতাধিক জায়গায় বিতরণ করেছেন। তার সুপারিশ করা রিতু ইন্টারন্যাশনালের ৩১ চালানে দুই কোটি টাকার বেশি ফাঁকি দেওয়ার আবদার কমিশনার রাখেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কমিশনারকে ফাঁসানোর দুরভিসন্ধি করেন।
এতে আরও বলা হয়, আমদানিতে সুবিধা করতে না পেরে ভুয়া ডিজি দাবিদার আহসান আলী ভায়াগ্রা ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। গত ২৪ জুলাই কমিশনার তার ভায়াগ্রার চালান আটক করেন। এতে আহসান আলী ক্ষিপ্ত হন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কমিশনারের বিষোদগার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকেন। তাকে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করার অসদুদ্দেশ্যে নিজে কমিশনারের সম্পদের কাল্পনিক ফিরিস্তি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করান। সর্বশেষ প্রতিহিংসা চরিতার্থ ও কমিশনারকে অপদস্থ করতে দুদক থেকে গোপনীয় নোটিস দুদক কর্মকর্তা নেয়ামুল হাসান গাজীর সইয়ের আগেই চুরি করে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করে দেন। কমিশনারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যে এনবিআর তদন্ত করে তার যথার্থতা পায়নি।