যশোর প্রতিনিধি: যশোরের বেনাপোলে এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত কোনো আমদানিকারক কখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রতিবার আগুন লাগার পর তদন্তের জন্য কমিটি হয়; কিন্তু কোনো তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর শেডে সর্বশেষ ২ অক্টোবর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে চারটি তদন্ত কমিটি হলেও দুই মাসে আলোর মুখ দেখেনি কোনো কমিটির রিপোর্ট।
বেনাপোল বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে মোট সাতবার অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। এতে আমদানি করা প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন। আমদানি করা মালামাল বন্দরে সংরক্ষণের জন্য আমদানিকারককে মোটা অংকের গুদাম ভাড়া, লেবার চার্জসহ ইকুইপমেন্ট চার্জ পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া বন্দরের সেবার ভ্যাটের টাকাও দিতে হয় আমদানিকারককে। প্রতি বছরে বাড়ানো হয় মাসুল। মালামাল যতদিন বন্দরে সংরক্ষিত থাকবে, তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষেরই বহন করার কথা। কিন্তু বেনাপোলে তা হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, শত অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ভর করেছে বন্দরে। বন্দরের দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। নীতিনির্ধারক রাজনীতিকদেরও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বড় বড় ব্যবসায়ী সংগঠনও এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা নেয় না। বন্দর সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এদিকে মনোনিবেশ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতো বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। বন্দরে ২ অক্টোবরের আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ৫ অক্টোবর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তারাও আগুন লাগার জন্য প্রধানত বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। এছাড়া নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়নি কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান বলেছিলেন, আলাদা শেড থাকার পরও কেন অন্য শেডে তুলার সঙ্গে কেমিক্যাল রাখা হলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানি করা মালামাল বন্দরে রাখার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব মালামালের বীমা করে না। কী কারণে বীমা করা হয় না, তা এক রহস্য। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমদানিকারকরা তাদের আমদানি করা পণ্যের শুধু ট্রাকের ওপর কোনো ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন বিমা কোম্পানির কাছ থেকে। বিমা কোম্পানিগুলো সেভাবেই বিমা করে থাকে আমদানি করা পণ্যের ওপর। বন্দরের পণ্যাগারে পণ্যের ক্ষতিপূরণ ব্যবসায়ীরা পাবেন না এমন শর্তে শুল্ক কর্তৃপক্ষ বন্দরে পণ্য রাখার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে কীভাবে অনুমতি দেয়, সে প্রশ্ন ওঠে প্রতিবার আগুন লাগার পর। কিন্তু উত্তর পাওয়া যায় না কখনো। এ ব্যাপারে বন্দর ব্যবহারকারী বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বার বার বন্দরের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। পণ্যজটের জন্য আরো গুদাম বা শেড নির্মাণের কথা বলা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ তাতে কান দিচ্ছে না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক নিতাইচন্দ্র সেন জানান, এখনও তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়নি। তবে বন্দর আইনে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সম্প্রতি ২৩ নম্বর শেডে আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়।