Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:30 pm

বেনামে বা ছদ্মনামে গ্রাহকের হিসাব খোলা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে বেনামে, ছদ্মনামে বা শুধু নম্বরযুক্ত কোনো গ্রাহকের হিসাব খোলা বা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন রেজুলেশনের আওতায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কোনো হিসাব খোলা বা পরিচালনা করা যাবে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে বাংলাদেশে সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে একটি নির্দেশনা জারি করে, যা ব্যাংকের সব ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় গ্রাহক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কথা বলা হয়েছে, যা ব্যাংকের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নসংক্রান্ত ঝুঁকি প্রতিরোধে মূল নীতিমালার অংশ হতে হবে। যেখানে বেনামে, ছদ্মনামে বা শুধু নম্বরযুক্ত কোনো গ্রাহকের হিসাব খোলা বা পরিচালনা করা যাবে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন রেজুলেশনের আওতায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কোনো হিসাব খোলা বা পরিচালনা করা যাবে না। শেল ব্যাংকের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। বিএফআইইউ কর্তৃক সময় সময় প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

নীতিমালায় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এ নির্দেশনা পরিপালনের দায়ভার এজেন্টের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর বর্তাবে। এজেন্ট ও গ্রাহকদের হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বিএফআইইউ’র জারি করা অভিন্ন হিসাব খোলার ফরম ব্যবহার করতে হবে। এজেন্ট ও গ্রাহকের সন্দেহজনক লেনদেন বা কার্যক্রম শনাক্তকরণ ও রিপোর্টকরণে সচেতন থাকা। এজেন্ট নির্বাচনে যথাযথ যাচাই বা বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক পরিচিতি নিশ্চিতকরণসহ বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনার পরিপালন কাঠামোর মধ্যে রয়েছে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ নীতিমালা, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অঙ্গীকার ঘোষণা, কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ ও অন্যান্য কার্যক্রম। এছাড়া নির্দেশনায় আরও যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলোÑগ্রাহক নির্বাচন নীতিমালা; গ্রাহক পরিচিতি ও গ্রাহক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা; সিডিডি-সংক্রান্ত অন্যান্য নির্দেশনা; সিডিডি সম্পাদন করা সম্ভব না হলে ব্যাংকের করণীয়; পলিটিক্যালি এক্সপোজড পার্সন; প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্ষেত্রে করণীয়; আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান বা উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার ক্ষেত্রে করণীয়; করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে করণীয়; এজেন্ট ব্যাংকিং-সংক্রান্ত নির্দেশনা; সশরীরে অনুপস্থিত গ্রাহকের ক্ষেত্রে করণীয়; নতুন সেবা বা প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে করণীয়; গোপনীয়তা রক্ষা; বিদেশে অবস্থিত ব্যাংক শাখা ও সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে করণীয়; লেনদেন মনিটরিং; নগদ লেনদেন রিপোর্ট; সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট; সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ও ইনডিপেনডেন্ট টেস্টিং;  শাখাগুলোর করণীয়; অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের করণীয়; মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভাগের করণীয়; সব ধরনের অয়্যার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে করণীয়; অর্ডারিং, ইন্টারমিডিয়ারি ও বেনিফিশিয়ারি ব্যাংকের করণীয়; নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ এবং রেকর্ড ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ।

নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, দেশে বিদ্যমান আইন, বিধিমালা ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশনাবলির সমন্বয়ে প্রতিটি ব্যাংকের একটি নিজস্ব নীতিমালা থাকবে, যা তাদের পরিচালনা পর্যদ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যাংকের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করবে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং আইন দুটির আওতায় জারি করা বিধিমালার সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি পরিচালনে বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনাগুলো মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৩ (১)(ঘ) এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ১৫(১)(ঘ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জারি করা হয়েছে।