হামিদুর রহমান ও সাইফুল আলম: আর্থিক সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছে বেসরকারি এয়ারলাইনস রিজেন্ট। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত পাওনা পরিশোধে নিয়মিত ব্যর্থ হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নির্ধারিত চার্জও পরিশোধ করতে পারেনি। রিজেন্টের কাছে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটির মোট পাওনা হয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা। আর এ পাওনা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, অর্থ সংকটের কারণে গত কয়েক বছর বিভিন্ন বিমানবন্দরের অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ বিল পরিশোধ করেনি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এর মধ্যে গত জানুয়ারি পর্যন্ত বেবিচকের বিলের পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সময়মতো এ বিল পরিশোধ না করায় এর সঙ্গে সারচার্জ যোগ হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে পাওনা দাঁড়িযেছে ১৮৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
বকেয়ার মধ্যে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাওনা রয়েছে ১০৩ কোটি ৩৪ লাখ ১৮ হাজার ৭০৫ টাকা, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭৯ কোটি ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৮ টাকা, কক্সবাজার বিমানবন্দরের এক কোটি ৮১ লাখ ৬০ লাখ ৯৬৫ টাকা, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২৪ হাজার টাকা, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ১৫ লাখ তিন হাজার ২৪৬ টাকা ও যশোর বিমানবন্দরের ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৩ টাকা। গত ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত এয়ারলাইনসটির কাছে বিভিন্ন চার্জ বাবদ ১১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওনা ছিল বেবিচকের। বারবার তাগাদা দিলেও তা পরিশোধ করছে না রিজেন্ট। ফলে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত লাভজনক হতে পারেনি। অথচ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় গ্রুপের বিভিন্ন লাভজনক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আয় এবং বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ বিনিয়োগ করা হয়। কয়েক বছর ধরে ক্যাশ ফ্লো সংকটে ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ফ্লাইট পরিচালনায় তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় কোম্পানিটিকে সংকোচন করতে বিভিন্ন গন্তব্য। এসব কারণে ভারসাম্য হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের। ফলে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বড় অঙ্কের পাওনা বকেয়া রেখেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।
এদিকে টিকিট বিক্রি করে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া সরকারি রাজস্ব পরিশোধ না করায় গত জুনে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছিল ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের টঙ্গী ভ্যাট বিভাগ। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত পাওনা পরিশোধে বিলম্বও হয়। আর এসব মোকাবিলা করার জন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য রিজেন্ট এয়ারওয়েজের (এইচজি এভিয়েশন) চেয়ারম্যান ইয়াসিন আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। পরে তার অফিসে গিয়ে একাধিকবার যোগযোগ করা হলে তিনি অফিসে আসেননি বলে জানান দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। আমি এখন বাইরে আছি। অফিসে গিয়ে ফোন করব।’ পরে ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি। এমনকি এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি উত্তর দেননি।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত অর্থ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট এয়ারলাইনসের কাছে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ পাওনা রয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা। আর এ পাওনা পরিশোধে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটিকে তাগাদা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি যথাসময়ে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর এয়ারলাইনসটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রা করে। বর্তমানে তাদের বহরে রয়েছে সাতটি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে রয়েছে একটি ড্যাশ-৮ কিউ ৩০০ উড়োজাহাজ, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৭০০ উড়োজাহাজ ও চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও কক্সবাজার এবং আন্তর্জাতিক রুটে ব্যাংকক, দোহা, কলকাতা, কুয়ালালামপুর, মাস্কট ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।

Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:10 am
বেবিচকের চার্জ পরিশোধে ব্যর্থ রিজেন্ট এয়ারওয়েজ
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: