ইসমাইল আলী: ২০২১ সালের মধ্যে দেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান ২০১০-এ। তবে তা এক শতাংশেও পৌঁছেনি। সরকারি-বেসরকারি খাতে কয়েকটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ১২৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে স্থাপিত কেন্দ্রগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সরকারি কেন্দ্রের দুই থেকে তিনগুণ।
তথ্যমতে, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে রয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। কাপ্তাই প্রকল্পের ভেতর কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান বাঁধ সংলগ্ন ২৩ একর জায়গায় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৯৫ লাখ ১২ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ১৫ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে গড়ে পাঁচ টাকা ৫৮ পয়সা।
এদিকে বেসরকারি খাতে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ্রগুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। চীনের স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও সুনফেন ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। ৩৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় দুই কোটি ৬৬ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ২২ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে গড়ে ১০ টাকা ৩৬ পয়সা, যা পিডিবির কেন্দ্রের প্রায় দ্বিগুণ।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে সিম্পা সোলার পাওয়ার কেন্দ্রটি, যার সক্ষমতা ৮ মেগাওয়াট। তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকায় প্যারাগন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়া ব্রিডার্স লিমিটেডের মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে থাইল্যান্ডের শীর্ষ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিম্বিয়ার সোলার ও বাংলাদেশের প্যারাগন গ্রুপ।
গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এক কোটি ১২ লাখ ৬৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ১৬ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১১ টাকা চার পয়সা। এ হিসাবে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পিডিবির কেন্দ্রের প্রায় দুইগুণ।
টেকনাফে রয়েছে বর্তমানে দেশের তৃতীয় বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর উৎপাদন সক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি নামক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জুলস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল)। নাফ নদীর তীরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য সারি করে বসানো হয়েছে ৮৭ হাজার সৌর প্যানেল। এ প্যানেলগুলোর মাঝখানে রয়েছে পাঁচটি সাব-স্টেশন।
এ কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তিন কোটি ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ১৯ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১১ টাকা ৮০ পয়সা। এ হিসাবে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পিডিবির কেন্দ্রের দুই দশমিক ১১ গুণ।
বেসরকারি খাতে স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ সোলার পার্কটি ময়মনসিংহে। ৫০ মেগাওয়াটের এ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে সিঙ্গাপুরের সিনএনার্জি হোল্ডিং পিটিই লিমিটেড ও বাংলাদেশে এইএফডিসি সোলার পাওয়ার লিমিটেড। গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ছয় কোটি ১৪ লাখ ৩৯ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ২২ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১৪ টাকা ৩৮ পয়সা। এ হিসাবে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পিডিবির কেন্দ্রের প্রায় আড়াইগুণ।
এদিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে রয়েছে দেশের সবচেয়ে ছোট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার এ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি দিয়েছে পিডিবি। আর বিনিয়োগ করেছে জার্মানির আইএফই এরিকসেন এজি এবং দেশীয় কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলে গঠন করেছে যৌথ বিনিয়োগ কোম্পানি ‘আইএফই-সিপিসি-জেইএল কনসোর্টিয়াম’।
গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার ১৭ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১৬ টাকা ১১ পয়সা। এ হিসাবে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পিডিবির কেন্দ্রের প্রায় তিনগুণ।
জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই বেসরকারি খাতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার মূল কারণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। তবে ব্যয় বেশি হলেও এগুলো পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। তাই নতুন আরও বেশকিছু সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।