চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ বের করতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ডিপোর ভেতরে থাকা ১১৮টি সিসি ক্যামেরার ৭টি ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডিং (ডিভিআর) যন্ত্র জব্দ করা হয়েছে। শনিবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ডিপোতে গিয়ে যন্ত্রগুলো জব্দ করে। সিআইডির তদন্ত দল ডিপোর ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত আইটি কক্ষে যায়। ওই কার্যালয় থেকে পুরো কনটেইনার ডিপোর আইটি সিস্টেম এবং সিসি ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে। তদন্তের জন্য এসব ছবি ও তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেদিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
বিএম কনটেইনার ডিপোয় আগুন ও বিস্ফোরণের হƒদয়বিদারক ঘটনায় মারা গেছেন ৪৩ জন। অনেককে জীবš§ৃত হয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে হবে। এ দুর্ঘটনায় দেশি-বিদেশি অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের দৃষ্টি থাকবে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানার। তাই এ ধরনের ঘটনার পুনরায় সংঘটিত হতে না পারে, সে লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। ঘটনাটি কী কারণে ঘটেছে, নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা; তা জানতে হবে। এ দুর্ঘটনার জন্য আগেভাগে কাউকে দোষারোপ করা উচিত হবে না। কনটেইনার ডিপোর মূল কাজ দৈনিক ভিত্তিতে কনটেইনারের জন্য জায়গা ভাড়া দেয়া এবং তা আদায় করা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও নিয়মানুযায়ী এখানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অফিস আছে। ওই অফিস ডিপোতে আমদানি-রপ্তানি কাজে সার্বক্ষণিক তদারকি করে। বন্দর কর্তৃপক্ষও বেসরকারি আইসিডিগুলো নিয়মিত তদারকি করে।
গতকাল শেয়ার বিজের ‘বেসরকারি কনটেইনার ডিপো: দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভা হয়নি দুই বছর’ শীর্ষক প্রতিবেদন আরও কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডের সম্প্রসারিত বিকল্প হিসেবে বেসরকারি ১৯টি আইসিডিকে নানা শর্তে লাইসেন্স দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আইসিডি থেকে রপ্তানি পণ্য যাতে দ্রুত বন্দরে যায়, সে বিষয়টিতে নজর রাখে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর স্পর্শকাতর এসব স্থাপনায় কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে কলকারখানা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিমালা আছে, কিন্তু বেসরকারি ডিপোগুলোর কার্যক্রম, পরিদর্শন ও মান নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির নিয়মিত সভা হয় না। গত দুই বছর এ সভা হয়নি। অথচ বেসরকারি আইসিডির কার্যক্রম, পরিদর্শন ও মান নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোসহ ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার, সিঅ্যান্ডএফ ও শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি আছে। প্রতি চার মাস পর চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল আইসিডি পরিদর্শন করে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেয়ার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের দায় আছে। বেসরকারি আইসিডি ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়মিত সভা হলে কিছু না কিছু ত্রুটি ও বিচ্যুতির কথা উঠে আসত। আইসিডি স্থাপন ও পরিচালনায় নীতিমালা আছে। সেগুলো যথাযথ পরিপালিত হলে অনেক অনিয়ম সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেক কমে যাবে।