নিয়াজ মাহমুদ: স্টক এক্সচেঞ্জ বেসরকারি কোম্পানিকে সরাসরি তালিকাভুক্ত করতে পারবে না। এখন থেকে বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণ করবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বাজারের উন্নয়নে কোম্পানির ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির সুযোগ রহিত করার সিদ্ধান্ত যথার্থ। এ সুযোগ সরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য রয়েছে কিন্তু বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো এ থেকে বঞ্চিত হবে, এটা বৈষম্যমূলক বলেও মনে করছেন এক বিশ্লেষক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন-২০১৫ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন-২০১৫ এর ৮ ধারা থেকে ১৩ ধারায় সিকিউরিটিজের ডিরেক্ট লিস্টিং, মূলধন ও অপারেশনসংক্রান্ত শর্তাবলি, ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের প্রক্রিয়া, গণপ্রস্তাবের দলিল প্রকাশ, শেয়ার নিষ্পত্তি এবং অন্যান্য বিষয়ে, যেমন পরিচালক ও উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ রয়েছে। এত দিন উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ডিরেক্ট লিস্টিংসংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করত। তবে বিএসইসির এ নির্দেশনার ফলে এখন থেকে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে ২০১৫ সালের লিস্টিং রেগুলেশন অনুসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে বেশ কিছু ক্ষমতা দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে হচ্ছে। এর প্রয়োজনীয়তা ছিল। বেসরকারি কোম্পানি সরাসরি তালিকাভুক্ত করতে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতার ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর সরকার মালিকানাধীন কোম্পানির মাধ্যমে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে করসাজির সম্ভাবনা খুব কম।
তবে ভিন্ন কথা বললেন আরেক বিশ্লেষক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের সুযোগ সরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য রয়েছে কিন্তু বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেÑএটা বৈষম্যমূলক আচরণ। ফলে বেসরকারি খাতের ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। কেননা বেসরকারি খাতের ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ডিরেক্ট লিস্টিংকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না।’
এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। বিএসইসির সিদ্ধান্ত ঠিক আছে উল্লেখ করে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ সরাসরি বেসরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ফলে কোম্পানির টাকা ব্যক্তি পকেটে চলে যায়। ব্যাপক কারসাজি হতো। তবে সরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। সরকারি কোম্পানিগুলো কারসাজি করলেও ওই টাকা সরকারের কাছেই যায়।
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্সের ২০এ ধারা অনুসারে কোম্পানির অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন-২০১৫ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন-২০১৫ এর ৮ ধারা থেকে ১৩ ধারা পর্যন্ত প্রয়োগ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত এক নির্দেশনার মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির ক্ষমতা এত দিন উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ছিল। তবে কমিশনের নির্দেশনার কারণে এখন থেকে সরকারি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানিকে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ছিল না।
এদিকে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সরকারি কোম্পানি। এর বাইরে স্কয়ার টেক্সটাইল ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এসেছে। তাছাড়া বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির তেমন কোনো উদাহরণ নেই।
Add Comment